উক্তি : কারো বক্তব্য বা কথাকেই উক্তি বলে। কোন বক্তা বা কথকের বাককর্ম বা কথাকেই বলা হয় উক্তি।
উক্তি ২ প্রকার- প্রত্যক্ষ উক্তি ও পরোক্ষ উক্তি।
প্রত্যক্ষ উক্তি : যে বাক্যে বক্তার কথা অবিকল উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথা উদ্ধরণ চিহ্ন (‘ ’/“ ”)-এর মধ্যে থাকে এবং বক্তার কথা উদ্ধৃত করার আগে কমা (,) ব্যবহার করা হয়। এগুলো দেখে সহজেই প্রত্যক্ষ উক্তি চেনা যায়।
পরোক্ষ উক্তি : যে বাক্যে বক্তার কথা অন্যের জবানীতে পরিবর্তিত/রূপান্তরিত ভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলে। পরোক্ষ উক্তিতে কোনো উদ্ধরণ চিহ্ন থাকে না, এবং প্রধম উদ্ধরণ চিহ্নে জায়গায় ‘যে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ পরোক্ষ উক্তিতেই ‘যে’ সংযোজক অব্যয়টি থাকে বলে একে দেখে পরোক্ষ উক্তি চেনা যেতে পারে। তবে ‘যে’ ছাড়াও অনেক পরোক্ষ উক্তি গঠিত হতে পারে।
উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম :
[উক্তি পরিবর্তন অনেকটাই ইংরেজি Narration-এর নিয়ম অনুযায়ী করা হয়।]
১. উদ্ধরণি চিহ্ন (‘ ’/“ ”) তুলে দিতে হবে এবং প্রথম উদ্ধরণ চিহ্নের জায়গায় ‘যে’ সংযোজক অব্যয় বসাতে হবে। যেমন-
প্রত্যক্ষ : আমি বললাম, ‘আমি খেলছি।’
পরোক্ষ : খোকন বললাম যে আমি খেলছি।
২. প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন-
খোকন বলল, ‘আমি খেলছি।’
খোকন বলল যে খোকন খেলছে।
খোকন বলল, ‘আমার বাবা কাজ করছে।’
খোকন বলল যে ওর বাবা কাজ করছে।
খোকন ছোটনকে বলল, ‘তুমি খুব ভালো ছেলে।’
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটন খুব ভালো ছেলে।
খোকন ছোটনকে বলল, ‘তোমার বাবা কাজ করছে।’
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটনের বাবা কাজ করছে।
৩. নিম্নোক্ত সর্বনাম ও কালসূচক পদগুলো উল্লিখিতভাবে পরিবর্তন করতে হবে :
প্রত্যক্ষ উক্তিতে | পরোক্ষ উক্তিতে | প্রত্যক্ষ উক্তিতে | পরোক্ষ উক্তিতে |
এই | সেই | গত কাল | আগের দিন |
ইহা | তাহা | গত কল্য | পূর্ব দিন |
এ | সে | ওখানে | ঐখানে |
আজ | সে দিন | এখানে | সেখানে |
আগামী কাল | পর দিন | এখন | তখন |
আগামীকল্য | পরবর্তী দিন |
|
|
যেমন-
খোকন বলল, ‘কাল স্কুল ছুটি’।
খোকন বলল যে পর দিন স্কুল ছুটি।
খোকন বলল, ‘আমি এখনই খাব।’
খোকন বলল যে সে তখনই খাবে।
৪. প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিয়াপদের পরিবর্তন করতে হবে। যেমন-
খোকন বলল, ‘আমি খাচ্ছি।’
খোকন বলল যে সে খাচ্ছে।
খোকন বলল, ‘আমি এখনই আসছি।’
খোকন বলল যে সে তখনই যাচ্ছে।
খোকন বলেছিল, ‘আমি খেলছি।’
খোকন বলেছিল যে সে খেলছিলো।
তবে অনেক সময় ক্রিয়াপদকে কাল অনুযায় পরিবর্তন না করলেও চলে।
খোকন বলেছিল, ‘শহরে খুব গরম পড়েছে’।
খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছিল।
অথবা, খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছে।
খোকন বলেছিল, ‘আমি বাজারে যাচ্ছি।’
খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছিলো।
অথবা, খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছে।
৫. প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোন চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে উক্তির কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন-
খোকন বলেছিল, ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।’
খোকন বলেছিল যে সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।
৬. প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাসূচক বা আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন করতে হয় বাক্যের ভাব অনুযায়ী। যেমন-
প্রশ্নবোধক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘আজ কি স্কুল ছুটি?’
খোকন জিজ্ঞাসা করল, আজ স্কুল ছুটি কি না।
বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার পরীক্ষার ফল দিয়েছে?’
বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, খোকনদের পরীক্ষার ফল দিয়েছে কি না।
অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘তোমরা আগামীকাল একবার এসো।’
খোকন তাদেরকে পরদিন একবার আসতে(বা যেতে) বলল।
খোকন তার গৃহশিক্ষককে বলল, ‘দয়া করে ভেতরে আসুন।’
খোকন তার গৃহশিক্ষককে ভেতরে আসতে অনুরোধ করল।
আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘বাঃ! পাখিটি তো চমৎকার।’
খোকন অবাক হয়ে/আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার।
খোকন বলল, ‘ইস! শীতে কতো মানুষই না কষ্ট পায়।’
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে, শীতে অনেক মানুষ কষ্ট পায়।
খোকন দুঃখের সাথে বলল, ‘শীতে আমরা কতোই না কষ্ট পাই।’
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে শীতে তারা(খোকনরা) বড়/অনেক কষ্ট পায়।