বাচ্য: বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে।
একটি বাক্যকে বিভিন্নভাবে লেখা যেতে পারে। একেকভাবে লিখলে বাক্যটির মূল বক্তব্য একই থাকলেও, একেকবার একেকটি উপাদান অধিক প্রাধান্য পায়। একটি বাক্যের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকেই বলে বাচ্য।
বাংলা ভাষায় ৩টি বাচ্য পাওয়া যায়- কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য।
[বিভিন্ন ধরনের বাচ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে বাক্যের কর্তা ও কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার।
কর্তা : যেই পদ বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তা বলে।
অর্থাৎ, যে বাক্যের কাজটি করে, সে-ই কর্তা। যেমন-
গরু ঘাস খায়। এখানে খাওয়ার কাজটি করছে ‘গরু’।- সুতরাং, এখানে ‘গরু’ কর্তা।
টেবিলটি সকাল থেকে এরকম নড়বড় করছে।- এখানে ‘নড়বড় করা’র কাজটি করছে ‘টেবিল’। সুতরাং, এখানে কর্তা ‘টেবিল’।
ক্রিয়াকে ‘কে/কারা‘ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়।
কর্ম : কর্তা যাকে আশ্রয় করে বা অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্ম বলে।
অর্থাৎ, কর্তা যার সাহায্যে কাজটি করে, তাই কর্ম। যেমন-
গরু ঘাষ খায়।- এখানে ‘গরু’ ‘খাওয়া’র কাজটি করার জন্য ‘ঘাস’কে অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে। সে ‘ঘাস’কে দিয়ে ‘খাওয়া’র কাজ করছে। সুতরাং, এখানে ‘ঘাস’ কর্ম।
বাবা আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন।- এখানে ‘কিনে দেয়া’র কাজটি করেছেন ‘বাবা’। ‘বাবা’ এখানে কর্তা। ‘বাবা’ ‘কিনে দেয়া’র কাজ করার জন্য ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’-র সাহায্য নিয়েছেন। এখানে, ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’ কর্ম।
ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়।]
কর্তৃবাচ্য : বাক্যে কর্তার প্রাধান্য রক্ষিত হলে তাকে কর্তৃবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্তা অনুযায়ী ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়।
কর্তৃবাচ্যের পদে কর্তায়- শূণ্য বিভক্তি হয়।
কর্মে- দ্বিতীয়া বা ষষ্ঠী বিভক্তি হয়। (শূণ্য বিভক্তিও হতে পারে)
যেমন-
ছাত্ররা বাংলা পড়ছে।
শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান।
রোগী পথ্য সেবন করে।
কর্মবাচ্য : কর্মপদ প্রধান রূপে প্রকাশিত হলে তাকে কর্মবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে ক্রিয়াপদ কর্তা অনুযায়ী না হয়ে কর্মপদ অনুযায়ী হয় এবং কর্মপদের অনুসারী হয়।
এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- তৃতীয়া বিভক্তি হয়।
কর্মে- শূণ্য বিভক্তি হয়। (কখনো কখনো দ্বিতীয়া বিভক্তিও হয়)
যেমন-
শিকারি কর্তৃক বাঘটি নিহত হয়েছে।
আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য বিজিত হয়।
চোরটা ধরা পড়েছে।
আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে। (কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি)
ভাববাচ্য : বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে প্রকাশিত হলে তাকে ভাববাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্ম থাকে না এবং কর্তাও প্রধান হয় না। কাউকে কোন কিছু সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে বলতে গেলে ভাববাচ্যে বলা যায়।
এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া বা তৃতীয়া বিভক্তি হয়।
নামপুরুষের ক্রিয়াপদ [ক্রিয়াপদ] হয়।
মাঝে মাঝে মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়াপদও যুক্ত হয়।
কখনো কখনো কর্তা উহ্য থাকে, অর্থাৎ কর্তা অনুল্লেখিত থাকে।
যেমন-
আমার খাওয়া হল না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ)
তোমার যাওয়া হবে না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ)
এ পথে চলা যায় না। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত)
কোথা থেকে আসা হচ্ছে। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত)
এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। (কর্তা ‘তুমি’ উহ্য)
এ রাস্তা আমার চেনা নেই।
কর্মকর্তৃবাচ্য : এছাড়াও বাংলায় আরো এক ধরনের প্রকাশভঙ্গির বাক্য দেখা যায়। এ ধরনের বাক্যের বাচ্যকে বলা হয় কর্মকর্তৃবাচ্য।
এ ধরনের বাক্যে কর্তাপদ উহ্য থাকে, তবে কর্মপদ থাকে। আর ওই কর্মপদই কর্তার কাজ করে।
অর্থাৎ, যে বাক্যে কর্তা থাকে না, কর্মই কর্তার কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। যেমন-
কাজটা ভাল দেখায় না।- এখানে কর্তা নেই। কর্ম হল ‘কাজ’। কিন্তু ‘কাজ’ নিজেই কর্তার মত বাক্যকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরকম-
বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে।
সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে।