সন্ধি: পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো।
সন্ধি ধ্বনির মিলন: সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।
সন্ধির উদ্দেশ্য: সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে আবারো দেয়া হলো:
সন্ধি ধ্বনির মিলন: সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।
সন্ধির উদ্দেশ্য: সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে আবারো দেয়া হলো:
নাম
|
অঘোষ
|
ঘোষ
|
নাসিক্য
| ||
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
|
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
| ||
ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) |
ক
|
খ
|
গ
|
ঘ
|
ঙ
|
চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) |
চ
|
ছ
|
জ
|
ঝ
|
ঞ
|
ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) |
ট
|
ঠ
|
ড
|
ঢ
|
ণ
|
ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) |
ত
|
থ
|
দ
|
ধ
|
ন
|
প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) |
প
|
ফ
|
ব
|
ভ
|
ম
|
সন্ধি প্রথমত ২ প্রকার- বাংলা শব্দের সন্ধি ও তৎসম সংস্কৃত শব্দের সন্ধি।
৪. ‘ম’-এর পরে কোনো বর্গীয় ধ্বনি বা স্পর্শ ধ্বনি আসলে ‘ম’ তার পরের ধ্বনির নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ম’-এর পরে যে বর্গীয় ধ্বনি আসে, ‘ম’ সেই ধ্বনির বর্গের পঞ্চম ধ্বনি হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, এই নিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম- সম+রাট = সম্রাট।
৬. তালব্য অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে নাসিক্য ধ্বনি আসলে নাসিক্য ধ্বনিটিও তালব্য নাসিক্য ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ‘চ/জ’ এর পরে ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনি) থাকলে সেগুলো ‘ঞ’ হয়ে যায়।
৭. ‘দ/ধ’-এর পরে অঘোষ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ (অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি) হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’-এর পরে ক, চ, ট, ত, প কিংবা খ, ছ, ঠ, থ, ফ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়।
৮. ঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (দ/ধ) এর পরে ‘স’ (দন্ত্য স ধ্বনি) থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় দন্ত্য অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’ এর পরে ‘স’ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। যেমন-
বিপদ+সংকুল = বিপৎসংকুল (‘দ’ এরপরে ‘স’ থাকায় ‘দ’, ‘ত’ হয়ে গেছে)
তদ+সম = তৎসম
৯. ‘ষ’ (মূর্ধণ্য ষ ধ্বনি) এর পরে অঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (ত, থ) থাকলে সেগুলো অঘোষ মূর্ধণ্য ধ্বনি (ট, ঠ) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ষ’ এর পরে ‘ত/থ’ থাকলে সেগুলো যথাক্রমে ‘ট/ঠ’ হয়ে যায়। যেমন-
কৃষ+তি = কৃষ্টি (ষ+ত = ষ+ট)
ষষ+থ = ষষ্ঠ (ষ+থ = ষ+ঠ)
১০. কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকে বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি বলে।
মনে রাখার জন্য: উত্থান, উত্থাপন
পরিষ্কৃত, পরিষ্কার
সংস্কৃত, সংস্কৃতি, সংস্কার
১১. যে সকল ব্যঞ্জনসন্ধি কোনো নিয়ম না মেনে, বরং নিয়মের ব্যতিক্রম করে সন্ধি হয়, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘পতৎ+অঞ্জলি’, এখানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি ‘অ’ এর সন্ধি হয়েছে। সুতরাং, সন্ধির নিয়ম অনুসারে ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ হওয়ার কথা। তার বদলে একটি ‘ত’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘পতঞ্জলি’। এরকম:
বিসর্গসন্ধি
দুঃ-উপসর্গের পরে ‘স’ থাকলে সন্ধিবদ্ধ শব্দে বিসর্গ বজায় থাকে। কিন্তু ‘ব’ বা ‘য’ থাকলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়। (‘ব’ ঘোষ ধ্বনি এবং ‘য’ অন্তস্থ ধ্বনি বলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়।) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি)
বাংলা শব্দের সন্ধি
খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলা শব্দের সন্ধি ২ প্রকার- স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।
স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বলে স্বরসন্ধি।
বাংলা শব্দের স্বরসন্ধিতে দুটো সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়। যেমন:
ব্যঞ্জনসন্ধি: স্বর আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরধ্বনিতে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
খাঁটি বাংলা শব্দের ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত ধ্বনি পরিবর্তনের সমীভবনের নিয়ম মেনে হয়। এবং ব্যঞ্জনসন্ধির ফলে সৃষ্ট শব্দগুলো মূলত কথ্যরীতিতেই সীমাবদ্ধ।
স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বলে স্বরসন্ধি।
বাংলা শব্দের স্বরসন্ধিতে দুটো সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়। যেমন:
অ+এ = এ (অ লোপ)
|
শত+এক = শতেক
|
কত+এক = কতেক
| |
আ+আ = আ (একটা আ লোপ)
|
শাঁখা+আরি =শাঁখারি
|
রূপা+আলি = রূপালি
| |
আ+উ = উ (আ লোপ)
|
মিথ্যা+উক = মিথ্যুক
|
হিংসা+উক = হিংসুক
|
নিন্দা+উক = নিন্দুক
|
ই+এ = ই (এ লোপ)
|
কুড়ি+এক = কুড়িক
|
ধনি+ইক = ধনিক
|
গুটি+এক = গুটিক
|
আশি+এর = আশির
|
ব্যঞ্জনসন্ধি: স্বর আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরধ্বনিতে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
খাঁটি বাংলা শব্দের ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত ধ্বনি পরিবর্তনের সমীভবনের নিয়ম মেনে হয়। এবং ব্যঞ্জনসন্ধির ফলে সৃষ্ট শব্দগুলো মূলত কথ্যরীতিতেই সীমাবদ্ধ।
সমীভবন: দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার:
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।
১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।
২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি।
৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা।
৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক।
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি।
স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে তাকে বলে স্বরসন্ধি। নিচে স্বরসন্ধির নিয়মগুলো দেয়া হলো-
১. ‘অ/আ’ এরপরে ‘অ/আ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আ’ হয় এবং তা প্রথম ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
২. ‘অ/আ’ এরপরে ‘ই/ঈ’ থাকলে উভয় মিলে ‘এ’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।
১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।
২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি।
৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা।
৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক।
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি।
তৎসম শব্দের সন্ধি
তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে তাকে বলে স্বরসন্ধি। নিচে স্বরসন্ধির নিয়মগুলো দেয়া হলো-
১. ‘অ/আ’ এরপরে ‘অ/আ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আ’ হয় এবং তা প্রথম ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+অ = আ
|
নর+অধম = নরাধম
|
প্রাণ+অধিক = প্রাণাধিক
|
হিম+অচল = হিমাচল
|
হস্ত+অন্তর = হস্তান্তর
|
হিত+অহিত = হিতাহিত
| ||||
অ+আ = আ
|
হিম+আলয় = হিমালয়
|
দেব+আলয় = দেবালয়
|
রত্ন+আকর = রত্নাকর
|
সিংহ+আসন= সিংহাসন
|
আ+অ = আ
|
যথা+অর্থ = যথার্থ
|
আশা+অতীত = আশাতীত
|
মহা+অর্ঘ = মহার্ঘ
|
কথা+অমৃত = কথামৃত
|
আ+আ = আ
|
বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়
|
কারা+আগার = কারাগার
|
মহা+আশয় = মহাশয়
|
সদা+আনন্দ = সদানন্দ
|
২. ‘অ/আ’ এরপরে ‘ই/ঈ’ থাকলে উভয় মিলে ‘এ’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+ই = এ
|
শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা
|
পূর্ণ+ইন্দু = পূর্ণেন্দু
|
স্ব+ইচ্ছা = স্বেচ্ছা
|
নর+ইন্দ্র = নরেন্দ্র
|
অ+ঈ = এ
|
পরম +ঈশ = পরমেশ
|
নর+ঈশ = নরেশ
| ||
আ+ই = এ
|
যথা+ইষ্ট = যথেষ্ট
| |||
আ+ঈ = এ
|
মহা+ঈশ = মহেশ
|
রমা+ঈশ = রমেশ
|
৩. ‘অ/আ’ এরপরে ‘উ/ঊ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ও’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+উ = ও
|
সূর্য+উদয় = সূর্যোদয়
|
নীল+উৎপল = নীলোৎপল
|
ফল+উদয় = ফলোদয়
|
হিত+উপদেশ = হিতোপদেশ
|
পর+উপকার = পরোপকার
|
প্রশ+উত্তর = প্রশ্নোত্তর
| |||
অ+ঊ = ও
|
গৃহ+ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব
|
চল+ঊর্মি = চলোর্মি
|
নব+ঊঢ়া = নবোঢ়া
| |
আ+উ = ও
|
যথা+উচিত = যথোচিত
|
মহা+উৎসব = মহোৎসব
|
যথা+উপযুক্ত = যথোপযুক্ত
| |
আ+ঊ = ও
|
গঙ্গা+ঊর্মি = গঙ্গোর্মি
|
৪. অ/আ এরপরে ঋ কার থাকলে উভয়ে মিলে অর হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+ঋ = অর
|
দেব+ঋষি = দেবর্ষি
|
অধম +ঋণ = অধমর্ণ
|
উত্তম+ঋণ = উত্তমর্ণ
| |
আ+ঋ = অর
|
মহা+ঋষি = মহর্ষি
|
রাজা+ঋষি = রাজর্ষি
|
৫. অ/আ এরপরে ঋত থাকলে অ/আ ও ঋত-র ঋ মিলে আর হয় এবং আর’, ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+ঋ (ঋত) = আর
|
শীত+ঋত = শীতার্ত
|
ভয়+ঋত = ভয়ার্ত
| ||
আ+ ঋ (ঋত) = আর
|
তৃষ্ণা+ঋত = তৃষ্ণার্ত
|
ক্ষুধা+ঋত = ক্ষুধার্ত
|
৬. অ/আ এরপরে এ/ঐ থাকলে উভয়ে মিলে ঐ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+এ = ঐ
|
জন+এক = জনৈক
|
হিত+এষী = হিতৈষী
|
সর্ব+এব = সর্বৈব
| |
অ+ঐ = ঐ
|
মত+ঐক্য = মতৈক্য
|
অতুল+ঐশ্বর্য = অতুলৈশ্বর্য
| ||
আ+এ = ঐ
|
সদা+এব = সদৈব
| |||
আ+ঐ = ঐ
|
মহা+ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য
|
৭. অ/আ এরপরে ও/ঔ থাকলে উভয়ে মিলে ঔ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অ+ও = ঔ
|
বন+ওষধি = বনৌষধি
| |||
অ+ঔ = ঔ
|
পরম+ঔষধ = পরমৌষধ
| |||
আ+ও = ঔ
|
মহা+ওষধি = মহৌষধি
| |||
আ+ঔ = ঔ
|
মহা+ঔষধ = মহৌষধ
|
৮. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ থাকলে উভয়ে মিলে ঈ হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ই+ই = ঈ
|
অতি+ইত = অতীত
|
গিরি+ইন্দ্র= গিরীন্দ্র
|
অতি+ইব= অতীব
|
প্রতি+ইত= প্রতীত
|
রবি+ইন্দ্র = রবীন্দ্র
| ||||
ই+ঈ = ঈ
|
পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা
|
প্রতি+ঈক্ষা= প্রতীক্ষা
| ||
ঈ+ই = ঈ
|
সতী+ইন্দ্র = সতীন্দ্র
|
মহী+ইন্দ্র = মহীন্দ্র
| ||
ঈ+ঈ = ঈ
|
সতী+ঈশ = সতীশ
|
ক্ষিতী+ঈশ= ক্ষিতীশ
|
শ্রী+ঈশ = শ্রীশ
|
পৃথ্বী+ঈশ = পৃথ্বীশ
|
দিললী+ঈশ্বর = দিল্লীশ্বর
|
৯. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে ই/ঈ-র জায়গায় য (য-ফলা,্য) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ই+অ = য-ফলা + অ
|
অতি+অন্ত = অত্যন্ত
|
প্রতি+অহ = প্রত্যহ
|
অতি+অধিক = অত্যধিক
|
আদি+অন্ত = আদ্যন্ত
|
যদি+অপি = যদ্যপি
|
পরি+অন্ত = পর্যন্ত
| |||
ই+আ = য-ফলা + আ
|
ইতি+আদি = ইত্যাদি
|
প্রতি+আশা = প্রত্যাশা
|
প্রতি+আবর্তন = প্রত্যাবর্তন
|
অতি+আশ্চর্য = অত্যাশ্চর্য
|
ই+উ = য-ফলা+ উ
|
অতি+উক্তি = অত্যুক্তি
|
অভি+উত্থান = অভূত্থান
|
অগ্নি+উৎপাত = অগ্নুৎপাত
|
প্রতি+উপকার = প্রত্যুপকার
|
ই+ঊ = য-ফলা+ ঊ
|
প্রতি+উষ = প্রত্যূষ
| |||
ঈ+আ= য-ফলা+ আ
|
মসী+আধার = মস্যাধার
| |||
ই+এ = য-ফলা+এ
|
প্রতি+এক = প্রত্যেক
| |||
ঈ+অ = য-ফলা+অ
|
নদী+অম্বু = নদ্যম্বু
|
১০. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ থাকলে উভয়ে মিলে ঊ হয় এবং তা উ/ঊ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
উ+উ = ঊ
|
মরু+উদ্যান = মরূদ্যান
| |||
উ+ঊ = ঊ
|
বহু+ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব
| |||
ঊ+উ = ঊ
|
বধূ+উৎসব = বধূৎসব
| |||
ঊ+ঊ = ঊ
|
ভূ+ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব
|
১১. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে উ/ঊ-র জায়গায় ব (ব-ফলা, ব) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
উ+অ = ব-ফলা+অ
|
সু+অল্প = স্বল্প
|
পশু+অধম = পশ্বধম
|
অনু+অয় = অন্বয়
|
মনু+অন্তর = মন্বন্তর
|
উ+আ = ব-ফলা+আ
|
সু+আগত = স্বাগত
|
পশু+আচার = পশ্বাচার
| ||
উ+ই = ব-ফলা+ই
|
অনু+ইত = অন্বিত
| |||
উ+ঈ = ব-ফলা+ঈ
|
তনু+ঈ = তন্বী
| |||
উ+এ = ব-ফলা+এ
|
অনু+এষণ = অন্বেষণ
|
১২. ঋ এরপরে ঋ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকলে ঋ এর জায়গায় র (র-ফলা, ্র ) এবং র-ফলা ঋ এর আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন, পিতৃ(প+ই+তঋ) + আলয় = পিত্রালয় পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ
১৩. (ক) এ/ঐ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘এ’ এর জায়গায় ‘অয়’ এবং ‘ঐ’ এর জায়গায় ‘আয়’ হয়।
১৩. (ক) এ/ঐ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘এ’ এর জায়গায় ‘অয়’ এবং ‘ঐ’ এর জায়গায় ‘আয়’ হয়।
এ+অ = অয়+অ
|
নে+অন = নয়ন
|
শে+অন = শয়ন
|
ঐ+অ = আয়+অ
|
নৈ+অক = নায়ক
|
গৈ+অক = গায়ক
|
(খ) ও/ঔ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘ও’ এর জায়গায় ‘অব’ এবং ‘ঔ’ এর জায়াগায় ‘আব’ হয়।
ও+অ = অব+অ
|
পো+অন = পবন
|
লো+অন = লবন
| |
ঔ+অ = আব+অ
|
পৌ+অক = পাবক
| ||
ও+আ = অব+আ
|
গো+আদি = গবাদি
| ||
ও+এ = অব+এ
|
গো+এষণা = গবেষণা
| ||
ও+ই = অব+ই
|
পো+ইত্র = পবিত্র
| ||
ঔ+ই = আব+ই
|
নৌ+ইক = নাবিক
| ||
ঔ+উ = আব+উ
|
ভৌ+উক = ভাবুক
|
১৪. যেসব স্বরসন্ধি নিয়ম মানে না, নিয়ম ভেঙে সন্ধি হয় তাদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘কুল+অটা’ সন্ধি করে হওয়ার কথা ‘কুলাটা’ (অ+অ = আ)। কিন্তু সন্ধি হওয়ার পর তা হয়ে গেছে ‘কুলটা’। তাই এটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন:
১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি | |
কুল+অটা = কুলটা (কুলাটা নয়)
|
গো+অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়)
|
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়)
|
অন্য+অন্য = অন্যান্য (অন্যোন্য নয়)
|
মার্ত+অন্ড = মার্তন্ড (মার্তান্ড নয়)
|
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন (শুদ্ধৌদন নয়)
|
ব্যঞ্জনসন্ধি
যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটিও যদি ব্যঞ্জনধ্বনি হয়, তাহলেই সেই সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। ব্যঞ্জনসন্ধি ৩ ভাবে হতে পারে:১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
১. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে তা দ্বিত্ব হয়, অর্থাৎ ‘ছ’-র বদলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন:
অ+ছ = চ্ছ
|
এক+ছত্র = একচ্ছত্র
|
মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি
|
অঙ্গ+ছেদ = অঙ্গচ্ছেদ
|
আলোক+ছটা= আলোকচ্ছটা
|
প্র+ছদ = প্রচ্ছদ
|
বৃক্ষ+ছায়া = বৃক্ষছায়া
|
স্ব+ছন্দ = স্বচ্ছন্দ
| ||
আ+ছ = চ্ছ
|
কথা+ছলে = কথাচ্ছলে
|
আচ্ছা+দন = আচ্ছাদন
| ||
ই+ছ = চ্ছ
|
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
|
বি+ছেদ= বিচ্ছেদ
|
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
|
বি+ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন
|
প্রতি+ছবি = প্রতিচ্ছবি
| ||||
উ+ছ = চ্ছ
|
অনু+ছেদ = অনুচ্ছেদ
|
ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
১.ক, চ, ট, ত, প থাকলে এবং তাদের পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়।
অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন:
অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন:
ক্+অ = গ+অ
|
দিক্+অন্ত = দিগন্ত
| ||
ক্+আ = গ+আ
|
বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর
| ||
ক্+ঈ = গ+ঈ
|
বাক্+ঈশ = বাগীশ
| ||
চ্+অ = জ+অ
|
ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত
| ||
ট্+আ = ড+আ
|
ষট্+আনন = ষড়ানন
| ||
ত্+অ = দ+অ
|
তৎ+অবধি = তদবধি
|
কৃৎ+অন্ত = কৃদন্ত
| |
ত্+আ = দ+আ
|
সৎ+আনন্দ = সদানন্দ
| ||
ত্+ই = দ+ই
|
জগৎ+ইন্দ্র = জগদিন্দ্র
| ||
ত্+উ = দ+উ
|
সৎ+উপায় = সদুপায়
|
সৎ+উপদেশ = সদুপদেশ
| |
প্+অ = ব+অ
|
সুপ্+অন্ত = সুবন্ত
|
ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
১. ক) ‘ত/দ’ এরপরে ‘চ/ছ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্চ/চ্ছ’ হয়। যেমন:
ত্+চ = চ্চ
|
সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা
|
উৎ+চারণ = উচ্চারণ
|
শরৎ+চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র
|
সৎ+চরিত্র = সচ্চরিত্র
|
সৎ+চিদানন্দ(চিৎ+আনন্দ) = সচ্চিদানন্দ
| ||
ত্+ছ = চ্ছ
|
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ
|
তৎ+ছবি = তচ্ছবি
| |
দ্+চ = চ্চ
|
বিপদ+চয় = বিপচ্চয়
| ||
দ্+ছ = চ্ছ
|
বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া
|
খ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘জ/ঝ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘জ্জ/জ্ঝ’ হয়। যেমন:
ত+জ = জ্জ
|
সৎ+জন = সজ্জন
|
উৎ+জ্বল = উজ্জ্বল
|
তৎ+জন্য = তজ্জন্য
|
যাবৎ+জীবন = যাবজ্জীবন
|
জগৎ+জীবন = জগজ্জীবন
| ||
দ+জ = জ্জ
|
বিপদ+জাল = বিপজ্জাল
| ||
ত+ঝ = জ্ঝ
|
কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা
|
গ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘শ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন:
ত+শ = চ+ছ = চ্ছ | উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস | চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি | উৎ+শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল |
ঘ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ড/ঢ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ড্ড/ড্ঢ’ হয়। যেমন:
ত+ড = ড্ড
|
উৎ+ডীন = উড্ডীন
| ||
ত+ঢ = ড্ঢ
|
বৃহৎ+ঢক্কা = বৃহড্ডক্কা
|
ঙ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘হ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘দ্ধ’ হয়। যেমন:
ত+হ = দ্ধ
|
উৎ+হার = উদ্ধার
|
উৎ+হৃত = উদ্ধৃত
|
উৎ+হত = উদ্ধত
|
দ+হ = দ্ধ
|
পদ+হতি = পদ্ধতি
|
তদ্+হিত = তদ্ধিত
|
চ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ল’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ল্ল’ হয়। যেমন:
২. কোনো অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি তার নিজের বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ক, চ, ট, ত, প- এদের পরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা য, র, ব থাকলে প্রথম ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) তার নিজের বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড, দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের প্রথম ধ্বনিগুলোর কোনোটি থাকলে, এবং তার পরে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনিগুলোর কোনোটি বা য, র, ব (এরা সবাই ঘোষ ধ্বনি) আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন:
৩.নাসিক্য ধ্বনির পরে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি নিজ বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি বা নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের পরে ক, চ, ট, ত, প থাকলে ক, চ, ট, ত, প যথাক্রমে গ, জ, ড, দ, ব অথবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের পঞ্চম/ শেষ ধ্বনির পরে বর্গের প্রথম ধ্বনি আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় বা পঞ্চম/ শেষ ধ্বনি হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির চেয়ে নাসিক্য ধ্বনিই অধিক প্রচলিত।
ত+ল = ল্ল
|
উৎ+লাস = উল্লাস
|
উৎ+লেখ = উল্লেখ
|
উৎ+লিখিত = উল্লিখিত
|
উৎ+লেখ্য = উল্লেখ্য
|
উৎ+লঙ্ঘন = উল্লঙ্ঘন
|
২. কোনো অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি তার নিজের বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ক, চ, ট, ত, প- এদের পরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা য, র, ব থাকলে প্রথম ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) তার নিজের বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড, দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের প্রথম ধ্বনিগুলোর কোনোটি থাকলে, এবং তার পরে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনিগুলোর কোনোটি বা য, র, ব (এরা সবাই ঘোষ ধ্বনি) আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন:
ক+দ = গ+দ
|
বাক+দান = বাগদান
|
বাক+দেবী = বাগ্দেবী
| |
ক+ব = গ+ব
|
দিক+বিজয় = দিগ্বিজয়
| ||
ক+জ = গ+জ
|
বাক+জাল = বাগ্জাল
| ||
ট+য = ড+য
|
ষট+যন্ত্র = ষড়যন্ত্র
| ||
ত+গ = দ+গ
|
উৎ+গার = উদ্গার
|
উৎ+গিরণ =উদ্গিরণ
|
সৎ+গুরু = সদ্গুরু
|
ত+ঘ = দ+ঘ
|
উৎ+ঘাটন = উদ্ঘাটন
| ||
ত+ভ = দ+ভ
|
উৎ+ভব = উদ্ভব
| ||
ত+য = দ+য
|
উৎ+যোগ = উদ্যোগ
|
উৎ+যম = উদ্যম
| |
ত+ব = দ+ব
|
উৎ+বন্ধন = উদ্বন্ধন
| ||
ত+র = দ+র
|
তৎ+রূপ = তদ্রূপ
|
৩.নাসিক্য ধ্বনির পরে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি নিজ বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি বা নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের পরে ক, চ, ট, ত, প থাকলে ক, চ, ট, ত, প যথাক্রমে গ, জ, ড, দ, ব অথবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের পঞ্চম/ শেষ ধ্বনির পরে বর্গের প্রথম ধ্বনি আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় বা পঞ্চম/ শেষ ধ্বনি হয়ে যায়।
ক+ন = গ/ঙ+ন | দিক+নির্ণয় = দিগনির্ণয়/ দিঙনির্ণয় | ||
ক+ম = গ/ঙ+ম | বাক+ময় = বাঙময় | ||
ত+ন = দ/ন+ন | জগৎ+নাথ = জগন্নাথ | উৎ+নয়ন = উন্নয়ন | উৎ+নীত = উন্নীত |
ত+ম = দ/ন+ম | তৎ+মধ্যে = তদমধ্যে/ তন্মধ্যে | মৃৎ+ময় = মৃন্ময় | তৎ+ময় = তন্ময় |
চিৎ+ময় = চিন্ময় |
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির চেয়ে নাসিক্য ধ্বনিই অধিক প্রচলিত।
৪. ‘ম’-এর পরে কোনো বর্গীয় ধ্বনি বা স্পর্শ ধ্বনি আসলে ‘ম’ তার পরের ধ্বনির নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ম’-এর পরে যে বর্গীয় ধ্বনি আসে, ‘ম’ সেই ধ্বনির বর্গের পঞ্চম ধ্বনি হয়ে যায়।
ম+ক = ঙ+ক | শম+কা = শঙ্কা | ম+ভ = ম+ভ | কিম+ভূত = কিম্ভূত |
ম+চ = ঞ+চ | সম+চয় = সঞ্চয় | ম+ন = ন্ন | কিম+নর = কিন্নর |
ম+ত = ন+ত | সম+তাপ = সন্তাপ | সম+ন্যাস = সন্ন্যাস | |
ম+দ = ন+দ | সম+দর্শন = সন্দর্শন | ম+ধ = ন্ধ | সম+ধান = সন্ধান |
উল্লেখ্য, আধুনিক বাংলায় ‘ম’-এর পরে ক-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ক-বর্গের নাসিক্য/ পঞ্চম ধ্বনি ‘ঙ’-র বদলে ‘ং’ হয়। যেমন, ‘সম+গত’-এ ‘ম’ ও ‘গ (ক-বর্গীয় ধ্বনি)’ সন্ধি হয়ে ‘ম’, ‘ঙ’ না হয়ে ‘ং’ হয়ে ‘সংগত’। এরকম-
অহম+কার = অহংকার
সম+খ্যা = সংখ্যা
অহম+কার = অহংকার
সম+খ্যা = সংখ্যা
৫. ‘ম’-এর পরে অন্তঃস্থ ধ্বনি (য, র, ল, ব) কিংবা উষ্ম ধ্বনি (শ, ষ, স, হ) থাকলে ‘ম’-এর জায়গায় ‘ং’ হয়।
সম+যম = সংযম | সম+বাদ = সংবাদ | সম+রক্ষণ = সংরক্ষণ | সম+লাপ = সংলাপ |
সম+শয় = সংশয় | সম+সার = সংসার | সম+হার = সংহার | বারম+বার = বারংবার |
কিম+বা = কিংবা | সম+বরণ = সংবরণ | সম+যোগ = সংযোগ | সম+যোজন = সংযোজন |
সম+শোধন = সংশোধন | সর্বম+সহা = সর্বংসহা | স্বয়ম+বরা = স্বয়ম্বরা |
উল্লেখ্য, এই নিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম- সম+রাট = সম্রাট।
৬. তালব্য অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে নাসিক্য ধ্বনি আসলে নাসিক্য ধ্বনিটিও তালব্য নাসিক্য ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ‘চ/জ’ এর পরে ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনি) থাকলে সেগুলো ‘ঞ’ হয়ে যায়।
চ+ন = চ+ঞ | যাচ+না = যাচ্ঞা | রাজ+নী = রাজ্ঞী | |
জ+ন = জ+ঞ | যজ+ন = যজ্ঞ |
৭. ‘দ/ধ’-এর পরে অঘোষ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ (অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি) হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’-এর পরে ক, চ, ট, ত, প কিংবা খ, ছ, ঠ, থ, ফ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়।
দ˃ ত | তদ্+কাল = তৎকাল | হৃদ+কম্প = হৃৎকম্প | তদ+পর = তৎপর |
তদ+ত্ব = তত্ত্ব | |||
ধ˃ ত | ক্ষুধ+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা |
৮. ঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (দ/ধ) এর পরে ‘স’ (দন্ত্য স ধ্বনি) থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় দন্ত্য অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’ এর পরে ‘স’ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। যেমন-
বিপদ+সংকুল = বিপৎসংকুল (‘দ’ এরপরে ‘স’ থাকায় ‘দ’, ‘ত’ হয়ে গেছে)
তদ+সম = তৎসম
৯. ‘ষ’ (মূর্ধণ্য ষ ধ্বনি) এর পরে অঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (ত, থ) থাকলে সেগুলো অঘোষ মূর্ধণ্য ধ্বনি (ট, ঠ) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ষ’ এর পরে ‘ত/থ’ থাকলে সেগুলো যথাক্রমে ‘ট/ঠ’ হয়ে যায়। যেমন-
কৃষ+তি = কৃষ্টি (ষ+ত = ষ+ট)
ষষ+থ = ষষ্ঠ (ষ+থ = ষ+ঠ)
১০. কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকে বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি বলে।
বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি | ||
উৎ+স্থান = উত্থান | উৎ+স্থাপন = উত্থাপন | |
পরি+কৃত = পরিষ্কৃত | পরি+কার = পরিষ্কার | |
সম+কৃত = সংস্কৃত | সম+কৃতি = সংস্কৃতি | সম+কার = সংস্কার |
মনে রাখার জন্য: উত্থান, উত্থাপন
পরিষ্কৃত, পরিষ্কার
সংস্কৃত, সংস্কৃতি, সংস্কার
১১. যে সকল ব্যঞ্জনসন্ধি কোনো নিয়ম না মেনে, বরং নিয়মের ব্যতিক্রম করে সন্ধি হয়, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘পতৎ+অঞ্জলি’, এখানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি ‘অ’ এর সন্ধি হয়েছে। সুতরাং, সন্ধির নিয়ম অনুসারে ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ হওয়ার কথা। তার বদলে একটি ‘ত’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘পতঞ্জলি’। এরকম:
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি | |
আ+চর্য = আশ্চর্য | গো+পদ = গোষ্পদ |
বন+পতি = বনস্পতি | বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি |
তৎ+কর = তস্কর | পর+পর = পরস্পর |
ষট+দশ = ষোড়শ | এক+দশ = একাদশ |
পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি | মনস+ঈষা = মনীষা |
মনে রাখার জন্য: আশ্চর্য, গোষ্পদ
বনস্পতি, বৃহস্পতি
তস্কর, পরস্পর
ষোড়শ, একাদশ
বনস্পতি, বৃহস্পতি
তস্কর, পরস্পর
ষোড়শ, একাদশ
পতঞ্জলি, মনীষা
বিসর্গ সন্ধি: যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটি যদি বিসর্গ হয়, তবে তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি ২ ভাবে সম্পাদিত হয়:
১. বিসর্গ + স্বরধ্বনি
২. বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি
১. বিসর্গ + স্বরধ্বনি
২. বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি
বিসর্গসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধির সম্পর্ক: সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী শব্দ বা পদের শেষে ‘র্’ বা ‘স্’ থাকলে তাদের বদলে ‘ঃ’ বা অঘোষ ‘হ’ উচ্চারিত হয়। এর উপর ভিত্তি করে বিসর্গকে ২ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
র-জাত বিসর্গ: ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর- পুনঃ, ইত্যাদি।
স-জাত বিসর্গ: ‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস- নমঃ, পুরস- পুরঃ, শিরস- শিরঃ, ইত্যাদি।
মূলত, ‘ঃ’ হলো ‘র্’ ও ‘স্’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ উভয়েই মূলত ব্যঞ্জনধ্বনিরই অন্তর্গত। এই কারণে অনেকে বিসর্গ সন্ধিকেও ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্গত বলে মনে করে।
বিসর্গ + স্বরধ্বনি: ‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়। যেমন- ততঃ+অধিক = ততোধিক
অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব অথবা হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ধ্বনি থাকলে কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। যেমন:
র-জাত বিসর্গ: ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর- পুনঃ, ইত্যাদি।
স-জাত বিসর্গ: ‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস- নমঃ, পুরস- পুরঃ, শিরস- শিরঃ, ইত্যাদি।
মূলত, ‘ঃ’ হলো ‘র্’ ও ‘স্’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ উভয়েই মূলত ব্যঞ্জনধ্বনিরই অন্তর্গত। এই কারণে অনেকে বিসর্গ সন্ধিকেও ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্গত বলে মনে করে।
বিসর্গ + স্বরধ্বনি: ‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়। যেমন- ততঃ+অধিক = ততোধিক
বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি
১. (ক) ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে, ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ও’ হয়।অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব অথবা হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ধ্বনি থাকলে কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। যেমন:
তিরঃ+ধান = তিরোধান (অ+ঃ+ধ) | মনঃ+রম = মনোরম (অ+ঃ+র) |
তপঃ+বন = তপোবন (অ+ঃ+ব) | মনঃ+হর = মনোহর (অ+ঃ+হ) |
(খ) ‘অ’-এর পরে র-জাত ‘ঃ’ থাকলে, এবং তারপরে স্বরধ্বনি কিংবা ঐ একই ধ্বনিগুলো থাকলে (ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি ও হ), ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন:
২. ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ কিংবা, গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন:
অন্তঃ+গত = অন্তর্গত (অ+ঃ+গ) | পুনঃ+আয় = পুনরায় (অ+ঃ+আ) |
অন্তঃ+ধান = অন্তর্ধান (অ+ঃ+ধ) | পুনঃ+উক্ত = পুনরুক্ত (অ+ঃ+উ) |
অন্তঃ+ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত (অ+ঃ+ভ) | পুনঃ+জন্ম = পুনর্জন্ম (অ+ঃ+জ) |
অন্তঃ+বর্তী = অন্তর্বর্তী (অ+ঃ+ব) | পুনঃ+বার = পুনর্বার (অ+ঃ+ব) |
অহঃ+অহ = অহরহ (অ+ঃ+অ) | পুনঃ+অপি = পুনরপি (অ+ঃ+অ) |
প্রাতঃ+উত্থান = প্রাতরুত্থান (অ+ঃ+উ) |
২. ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ কিংবা, গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন:
নিঃ+আকার = নিরাকার (ই+ঃ+আ) | দুঃ+যোগ = দুর্যোগ (উ+ঃ+য) |
নিঃ+আকরণ = নিরাকরণ (ই+ঃ+আ) | দুঃ+লোভ = দুর্লোভ (উ+ঃ+ল) |
নিঃ+জন = নির্জন (ই+ঃ+জ) | দুঃ+অন্ত = দুরন্ত (উ+ঃ+অ) |
আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ (ঈ+ঃ+ব) | প্রাদুঃ+ভাব = প্রাদুর্ভাব (উ+ঃ+ভ) |
জ্যোতিঃ+ময় = জ্যোতির্ময় (ই+ঃ+ম) | বহিঃ+গত = বহির্গত (ই+ঃ+গ) |
ব্যতিক্রম: ‘ই/উ+ঃ+র’ হলে ‘ঃ’ লোপ পায় এবং ‘ঃ’-র আগের হ্রস্ব স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়। যেমন- ‘নিঃ+রব’, এখানে ‘ন+ই+ঃ’-এর ‘ই+ঃ’-এর পরে ‘র’ ধ্বনির সন্ধি হয়েছে। সুতরাং এখানে ‘ঃ’ লোপ পাবে এবং ‘ই’-র জায়গায় ‘ঈ’ হবে। অর্থাৎ সন্ধি হয়ে হবে ‘নিঃ+রব = নীরব’। এরকম- নিঃ+রস = নীরস।
৩. বিসর্গের পরে তালব্য অঘোষ ধ্বনি (চ, ছ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় তালব্য শিশ (শ) ধ্বনি, বিসর্গের পরে মূর্ধণ্য অঘোষ ধ্বনি (ট, ঠ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় মূর্ধণ্য শিশ (ষ) ধ্বনি,
বিসর্গের পরে দন্ত্য অঘোষ ধ্বনি (ত, থ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় দন্ত্য শিশ (স) ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ,
‘ঃ’-এর পরে ‘চ/ছ’ (তালব্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘শ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ট/ঠ’ (মূর্ধণ্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘ষ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ত/থ’ (দন্ত্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘স’ হয়। যেমন:
৪. (ক) ‘অ/আ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি (স) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘স’ হয়।
(খ) ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ মূর্ধণ্য শিশ ধ্বনি (ষ) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ষ’ হয়।
যেমন:
৫. ‘ঃ’-র পরে স্ত, স্থ কিংবা স্প যুক্তব্যঞ্জনগুলো থাকলে পূর্ববর্তী ‘ঃ’ অবিকৃত থাকে কিংবা লোপ পায়। যেমন:
নিঃ+স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ/ নিস্তব্ধ
দুঃ+স্থ = দুঃস্থ/ দুস্থ
নিঃ+স্পন্দ = নিঃস্পন্দ/ নিস্পন্দ
৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ধির পরও ‘ঃ’ থেকে যায়। যেমন:
প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া
৭. কয়েকটি বিশেষ বিসর্গ সন্ধি (এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিপাতনে সিদ্ধ বা বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি নয়। এগুলো কেবলই বিসর্গ সন্ধি)
বিসর্গের পরে দন্ত্য অঘোষ ধ্বনি (ত, থ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় দন্ত্য শিশ (স) ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ,
‘ঃ’-এর পরে ‘চ/ছ’ (তালব্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘শ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ট/ঠ’ (মূর্ধণ্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘ষ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ত/থ’ (দন্ত্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘স’ হয়। যেমন:
+চ/ছ = শ+চ/ছ | নিঃ+চয় = নিশ্চয় | শিরঃ+ছেদ = শিরশ্ছেদঃ | |
+ট/ঠ = ষ+ট/ঠ | ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার | নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুরঃ | |
+ত/থ = স+ত/থ | দুঃ+তর = দুস্তর | দুঃ+থ = দুস্থ |
৪. (ক) ‘অ/আ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি (স) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘স’ হয়।
(খ) ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ মূর্ধণ্য শিশ ধ্বনি (ষ) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ষ’ হয়।
যেমন:
(ক) অ/আ+ঃ+ক/খ/প/ফ | (খ) ই/ঈ/উ/ঊ/এ/ঐ/ও/ঔ +ঃ+ক/খ/প/ফ | ||
নমঃ+কার = নমস্কার | পদঃ+খলন = পদস্খলন | নিঃ+কার = নিষ্কর | দুঃ+কার = দুষ্কর |
পুরঃ+কার = পুরস্কার | নিঃ+ফল = নিষ্ফল | দুঃ+প্রাপ্য = দুষ্প্রাপ্য | |
মনঃ+কামনা = মনস্কামনা | বাচঃ+পতি = বাচস্পতি | নিঃ+পাপ = নিষ্পাপ | দুঃ+কৃতি = দুষ্কৃতি |
তিরঃ+কার = তিরস্কার | বহিঃ+কৃত = বহিষ্কৃত | চতুঃ+কোণ = চতুষ্কোণ | |
ভাঃ+কর = ভাস্কর | বহিঃ+কার = বহিষ্কার | চতুঃ+পদ = চতুষ্পদ | |
আবিঃ+কার = আবিষ্কার |
৫. ‘ঃ’-র পরে স্ত, স্থ কিংবা স্প যুক্তব্যঞ্জনগুলো থাকলে পূর্ববর্তী ‘ঃ’ অবিকৃত থাকে কিংবা লোপ পায়। যেমন:
নিঃ+স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ/ নিস্তব্ধ
দুঃ+স্থ = দুঃস্থ/ দুস্থ
নিঃ+স্পন্দ = নিঃস্পন্দ/ নিস্পন্দ
৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ধির পরও ‘ঃ’ থেকে যায়। যেমন:
প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া
৭. কয়েকটি বিশেষ বিসর্গ সন্ধি (এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিপাতনে সিদ্ধ বা বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি নয়। এগুলো কেবলই বিসর্গ সন্ধি)
বিশেষ বিসর্গ সন্ধি | |
বাচঃ+পতি = বাচস্পতি | অহঃ+নিশা = অহর্নিশ |
ভাঃ+কর = ভাস্কর | অহঃ+অহ = অহরহ |
বিসর্গসন্ধি
বিসর্গযুক্ত ‘ই/উ’ ধ্বনির পরে ‘গ/দ’ থাকলে বিসর্গ স্থলে রেফ হয়। (আসলে গ/ঘ ও দ/ধ, ঘোষ ধ্বনি থাকলে) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি)
ই+ঃ+গ
|
নিঃ+গত = নির্গত
| |
ই+ঃ+দ
|
নিঃ+দেশ = নির্দেশ
|
নিঃ+দোষ = নির্দোষ
|
উ+ঃ+গ
|
দুঃ+গত = দুর্গত
|
চতুঃ+গুণ = চতুর্গুণ
|
উ+ঃ+ঘ
|
দুঃ+ঘটনা = দুর্ঘটনা
| |
উ+ঃ+দ
|
চতুঃ+দিক = চতুর্দিক
|
বিসর্গসন্ধি
দুঃ-উপসর্গের পরে ‘স’ থাকলে সন্ধিবদ্ধ শব্দে বিসর্গ বজায় থাকে। কিন্তু ‘ব’ বা ‘য’ থাকলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়। (‘ব’ ঘোষ ধ্বনি এবং ‘য’ অন্তস্থ ধ্বনি বলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়।) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি)
‘দুঃ+স’ থাকলে বিসর্গ থাকে | ‘দুঃ+ব’ বা ‘দুঃ+য’ থাকলে বিসর্গ রেফ হয়ে যায় | ||
দুঃ+স | দুঃ+ব | দুঃ+য | |
দুঃ+সাহস = দুঃসাহস | দুঃ+সাধ্য = দুঃসাধ্য | দুঃ+বার = দুর্বার | দুঃ+যোগ = দুর্যাগ |
দুঃ+সংবাদ = দুঃসংবাদ | দুঃ+সময় = দুঃসময় | দুঃ+বিনীত = দুর্বিনীত | |
দুঃ+সহ = দুঃসহ | দুঃ+বিষহ = দুর্বিষহ | ||
দুঃ+ব্যবহার = দুর্ব্যবহার |