তৎসম শব্দ
বানানের সাধারণ অপরিবর্তনীয়তা
তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে৷ কারণ এইসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে৷
ই/ঈ বা উ/ঊ
- যে-সব তৎসম শব্দে ই/ঈ বা উ/ঊ উভয় শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কার-চিহ্ন ি বা ু ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: অটবি, আবলি, উর্ণা, উষা, কলশি, কিংবদন্তি, কুটির, খঞ্জনি, চিত্কার, ত্রুটি, ধমনি, ধূলি, পঞ্জি, পদবি, পেশি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, রচনাবলি, সরণি, সূচিপত্র৷
- তবে বহুল প্রচলিত বলে কিছু শব্দে ঈ-কার বজায় থাকবে। যেমন: গাভী, পল্লী, রানী, শ্রেণী।
- শব্দের ী (ঈ-কার) তৎসম হলে বজায় থাকবে, কিন্তু শব্দটির তদ্ভব রূপের ক্ষেত্রে ি (ই-কার) লিখতে হবে। যেমন: তৎসমতে পক্ষী, কিন্তু তদ্ভবতে পাখি। এছাড়াও যেমন: হস্তী --> হাতি, বাটী --> বাড়ি, ইত্যাদি।
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমন: অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য৷
ং
- সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে৷ যেমন: অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন৷
- তবে অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, গঙ্গা, বঙ্গ, লঙ্ঘন, সঙ্গ, সঙ্গী, প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে ঙ স্থানে ং হবে না৷
তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, ও মিশ্র শব্দ
ই ঈ উ ঊ
- সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, বা মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের -কার চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে ৷ এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে৷ যেমন: গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, ছড়ি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, মমি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, ছুঁড়ি, নিচ, নিচু, ইমান, চুন, পুব, ভুখা, মুলা, পুজো, উনিশ, উনচল্লিশ৷
- অনুরূপভাবে, -আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে৷ যেমন: খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, হেঁয়ালি৷
- তবে কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে৷ যেমন: রানী, পরী, গাভী৷
- সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে কী শব্দটি যেমন: কী করছো? কী পড়ো? কী খেলে? কী আর বলব? কী জানি? কী যে করি! এটা কী বই (অর্থাৎ এটা কীসের বই)? কী করে যাব? কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে? কী আনন্দ! কী দুরাশা!
- অন্য ক্ষেত্রে অব্যয় পদরূপে ই-কার দিয়ে কি শব্দটি লেখা হবে৷ যেমন: তুমিও কি যাবে? সে কি এসেছিল? কি বাংলা কি ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী৷
- পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে৷ যেমন: ছেলেটি, লোকটি, বইটি৷
ক্ষ
খির, খুর ও খেত না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর, ক্ষুর ও ক্ষেত-ই লেখা হবে৷ তবে অতৎসম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেপা, খিধে, ইত্যাদি লেখা হবে৷
মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
- তৎসম শব্দের বানানে ণ, ন-য়ের নিয়ম ও শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে৷ এ-ছাড়া তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র কোনো শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না৷ যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, সোনা, হর্ন৷
- তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্য বর্ণ ণ হয়৷ যেমন: কণ্টক, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড৷ কিন্তু তত্সম ছাড়া অন্যান্য সকল শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগেও কেবল ন হবে৷ যেমন: ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড৷
শ, ষ, স
- তৎসম শব্দে শ, ষ, স-য়ের নিয়ম মানতে হবে৷ এ-ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কৃতের ষত্ব-বিধি প্রযোজ্য হবে না৷
- বিদেশী মূল শব্দে শ, স-য়ের যে প্রতিষঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তাই ব্যবহার করতে হবে৷ যেমন: সাল (=বত্সর), সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, শৌখিন, মসলা, জিনিস, আপস, সাদা, পোশাক, বেহেশ্ ত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শার্ট, স্মার্ট৷ তবে, পুলিশ শব্দটি ব্যতিক্রমরূপে শ দিয়ে লেখা হবে৷
- তৎসম শব্দে ট, ঠ বর্ণের পূর্বে ষ হয়৷ যেমন: বৃষ্টি, দুষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠা৷ কিন্তু বিদেশী শব্দে এই ক্ষেত্রে স হবে৷ যেমন: স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর, স্ট্রিট৷ কিন্তু খ্রিষ্ট যেহেতু বাংলায় আত্তীকৃত শব্দ এবং এর উচ্চারণও হয় তত্সম কৃষ্টি, তুষ্ট, ইত্যাদি শব্দের মতো, তাই ষ্ট দিয়ে খ্রিষ্ট শব্দটি লেখা হবে৷
আরবি-ফারসি থেকে আগত স/শ
আরবি-ফারসি শব্দে 'সে' , 'সিন্', 'সোয়াদ' বর্ণগুলির প্রতিবর্ণরূপে স, এবং 'শিন্' -এর প্রতিবর্ণরূপে শ ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান (হিজরি মাস), শাওয়াল (হিজরি মাস), বেহেশ্ত৷ এই ক্ষেত্রে স-এর পরিবর্তে ছ লেখার কিছু কিছু প্রবণতা দেখা যায়, তা ঠিক নয়৷ তবে যেখানে বাংলায় বিদেশী শব্দের বানান সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে স ছ-য়ের রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ ব্যবহার করতে হবে৷ যেমন: পছন্দ, মিছিল, মিছরি, তছনছ৷
ইংরেজি থেকে আগত s
ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশী s বর্ণ বা ধ্বনির জন্য স এবং sh, -sion, -ssion, -tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে৷
জ, য
বাংলায় প্রচলিত বিদেশী শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে৷ যেমন: কাগজ, জাহাজ, হুকুম, হাসপাতাল, টেবিল, পুলিশ, ফিরিস্তি, হাজার, বাজার, জুলুম, জেব্রা৷
কিন্তু ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে 'যে', 'যাল', 'যোয়াদ', 'যোয়া' রয়েছে, যার ধ্বনি ইংরেজি z-এর মতো৷ সেক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণগুলির জন্য য ব্যবহার হওয়া সঙ্গত৷ যেমন: আযান, এযিন, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্ যিন, যোহর, রমযান৷ তবে কেউ ইচ্ছা করলে এই ক্ষেত্রে য-এর পরিবর্তে জ ব্যবহার করতে পারেন৷ জাদু, জোয়াল, জো, ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে লেখা বাঞ্ছনীয়৷
এ, অ্যা
- বাংলায় এ বা ে-কার দ্বারা অবিকৃত এ এবং বিকৃত বা ব্যাঁকা অ্যা এই উভয় উচ্চারণ বা ধ্বনি নিষ্পন্ন হয়৷ তত্সম বা সংস্কৃত ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি, ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপভাবে লেখার নিয়ম আছে৷
- অনুরূপ তৎসম এবং বিদেশী শব্দ ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত-বিকৃত নির্বিশেষে এ বা ে-কার হবে৷ যেমন: দেখে, দেখি, জেনো, কেন, কেনো (ক্রয় করো), গেল, গেলে, গেছে৷
- বিদেশী শব্দে অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ বা ে-কার ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: এন্ড (end) , নেট, বেড, শেড৷
- বিদেশী শব্দে বিকৃত বা ব্যাঁকা উচ্চারণে অ্যা বা (য-ফলা+আ-কার) ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: অ্যান্ড (and), অ্যাবসার্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাক, ম্যানেজার, হ্যাট৷
- তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষ কিছু দেশী শব্দ রয়েছে যার (য-ফলা+আ-কার)-যুক্ত রূপ বহুল-পরিচিত৷ যেমন: ব্যাঙ, চ্যাঙ, ল্যাঙ, ল্যাঠা৷ এ-সব শব্দে (য-ফলা+আ-কার) অপরিবর্তিত থাকবে৷
ও এবং োকার
বাংলা অ-কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও-কার হয়৷ এই উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনো আদিতে অনেকে যথেচ্ছভাবে ো-কার ব্যবহার করছেন৷ যেমন: ছিলো, করলো, বলতো, কোরছ, হোলে, যেনো, কেনো (কীজন্য), ইত্যাদি ো-কারযুক্ত বানান লেখা হচ্ছে৷ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অনুরূপ ো-কার ব্যবহার করা হবে না৷
বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ো-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে পারে৷
ক্রিয়াপদের যা যা রূপে ো-কার লাগানো হবে:
- তুমি, তোমরা (সাধারণ বর্তমান কাল): ধরো, চড়ো, বলো, হও, খাও, যাও, বানাও
- তুমি, তোমরা (ঘটমান বর্তমান কাল): ধরছো, চড়ছো, বলছো, হচ্ছো, খাচ্ছো, যাচ্ছো, বানাচ্ছো
- তুমি, তোমরা (পুরাঘটিত বর্তমান কাল): ধরেছো, চড়েছো, বলেছো, হয়েছো, খেয়েছো, গেছো, বানিয়েছো
- তুমি, তোমরা (বর্তমান অনুজ্ঞা): ধরো, চড়ো, বলো, হও, খাও, যাও, বানাও
- তুমি, তোমরা (ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা): ধোরো, চোড়ো, বোলো, হয়ো, খেও, যেও, বানিও
- সাধিত ধাতুর অসমাপিকা রূপ: ধরানো, চড়ানো, বলানো, খাওয়ানো, বানানো
ক্রিয়াপদের যা যা রূপে ো-কার লাগানো হবে না:
- এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (সাধারণ অতীত কাল): ধরল, চড়ল, বলল, হল, খেল, গেল, বানাল
- এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (ঘটমান অতীত কাল): ধরছিল, চড়ছিল, বলছিল, হচ্ছিল, যাচ্ছিল, বানাচ্ছিল
- এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (পুরাঘটিত অতীত কাল): ধরেছিল, চড়েছিল, বলেছিল, হয়েছিল, গেছিল/গিয়েছিল, বানিয়েছিল
- এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (নিত্যবৃত্ত অতীত কাল): ধরত, চড়ত, বলত, হত, খেত, যেত, বানাত
- আমি, আমরা (সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল): ধরব, চড়ব, বলব, হব, খাব, যাব, বানাব
- পুরাঘটিত অসমাপিকা রূপ: ধরে (ধোরে বা ধ'রে নয়), চড়ে, বলে, হয়ে
অন্যান্য শব্দ:
- ো-কারযুক্ত: তো, মতো, ভালো, আলো, কালো, কেন (কিসের জন্য), যেন, কোনো (বা কোনও), এখনো (বা এখনও), তখনো (বা তখনও), কারো (বা কারও)
- ো-কারবিহীন: বড় (বড়ো নয়), ঘন (ঘনো নয়), মন (মোন নয়), একজন (একজোন নয়), এক শ (অর্থাৎ ১০০; এক শো বা এক শ' নয়)
ং, ঙ
তৎসম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেভাবে ব্যবহার্য ও ব্যাকরণসম্মত সেইভাবে ব্যবহার করতে হবে৷ এ-সম্পর্কে পূর্বে তৎসম শব্দ অনুচ্ছেদে কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে৷ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে ওই নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই৷ তবে এই ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: রং, সং, পালং, ঢং, রাং, গাং৷ তবে শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ঙ হবে৷ যেমন: বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের৷ বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ-দু'টি ং দিয়ে লিখতে হবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে৷
রেফ ও দ্বিত্ব
তৎসম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, অ-তৎসম সকল শব্দেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমন: কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার৷
বিসর্গ
শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না৷ যেমন: কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ৷
পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে৷ তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়৷ যেমন: দুস্থ, নিস্পৃহ৷
বিদেশী শব্দ ও যুক্তবর্ণ
বাংলায় বিদেশী শব্দের বানানে যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণের দ্বিধা দূর করে৷ তাই ব্যাপকভাবে বিদেশী শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্ট করা অর্থাত্ ভেঙে দেওয়া উচিত নয়৷ শব্দের আদিতে তো অনুরূপ বিশ্লেষ সম্ভবই নয়৷ যেমন: স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং৷
হস্-চিহ্ন
- হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে৷ যেমন: কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক, করিস, দিস, দেখলে৷
- তবে যদি ভুল উচ্চারনের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেমন: উহ্, যাহ্, ওয়াক্ফ৷
- যদি অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেমন: কর্, ধর্, মর্, বল্।
ঊর্ধ্ব-কমা
ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে৷ যেমন: করল (<কর'ল<করিল), ধরত (<ধর'ত<ধরিত), বলে (<ব'লে<বলিয়া), হয়ে (হ'য়ে<হইয়া), দু জন (<দু' জন), চার শ (<চার শ'), চাল (<চা'ল<চাউল), আল (<আ'ল<আইল)৷
বিবিধ
সমাসবদ্ধ পদ
- সমাসবদ্ধ পদগুলি একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না৷ যেমন: সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমন্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সঙ্কল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র৷
- বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ পদটিকে একটি, কখনো একটির বেশি হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়৷ যেমন- মা-মেয়ে, মা-ছেলে, বেটা-বেটি, বাপ-বেটা, ভবিষ্যত-তহবিল, সর্ব-অঙ্গ, বে-সামরিক, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, কিছু-না-কিছু৷
বিশেষণ পদ
বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন- সুনীল আকাশ, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন, সুগন্ধি ফুল, লাল গোলাপ, ভালো দিন, সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু যদি সমাসবদ্ধ পদ অন্য বিশেষ্য বা ক্রিয়াপদের গণ বর্ণনা করে তাহলে স্বভাবতই সেই যুক্তপদ একসঙ্গে লিখতে হবে। যেমন- কতদূর যাবে, একজন অতিথি, তিনহাজার টাকা, বেশিরভাগ ছেলে, শ্যামলা-বরন মেয়ে। তবে কোথাও কোথাও সংখ্যাবাচক শব্দ একসঙ্গে লেখা যাবে। যেমন-দুজনা।
নঞর্থক শব্দ
নঞর্থক শব্দ আলাদা করে লেখা হবে, যেমন: জানি না ("জানিনা" নয়), হত না ("হতনা" নয়), শুনি নি ("শুনিনি" নয়), খাব না ("খাবনা" নয়), পান নি ("পাননি" নয়)।
উদ্ধৃতি
বাংলা যুক্তবর্ণের তালিকা
যুক্তবর্ণ বলতে একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়েছে। বাংলা লিখনপদ্ধতিতে যুক্তবর্ণের একটি বিশেষ স্থান আছে। এগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপাদান বর্ণগুলির চেয়ে দেখতে ভিন্ন, ফলে নতুন শিক্ষার্থীর এগুলি লেখা আয়ত্ত করতে সময়ের প্রয়োজন হয়।
যুক্তবর্ণগুলি বাংলা লিখন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। উচ্চারিত ধ্বনির সাথে এগুলির উপাদান ব্যঞ্জনবর্ণের নির্দেশিত ধ্বনির সবসময় সরাসরি সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। যেমন - পক্ব -এর উচ্চারণ পক্কো; বানানে ব-ফলা থাকলেও উচ্চারণে ব ধ্বনিটি অনুপস্থিত। রুক্ষ-এর উচ্চারণ রুক্খো; বানানের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষ যুক্তবর্ণটি ক ও ষ-এর যুক্তরূপ হলেও উচ্চারণ হয় ক্খ। বানান ও ধ্বনির এই অনিয়মও শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তবর্ণের সঠিক ব্যবহারে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নিচের যুক্তবর্ণের তালিকাটি বাংলা সঠিকভাবে লিখতে সহায়ক হতে পারে। এখানে বাংলায় ব্যবহৃত ২৮৫টি যুক্তবর্ণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন যুক্তবর্ণ সম্ভবত বাংলায় প্রচলিত নয়।
- ক্ক = ক + ক; যেমন- আক্কেল, টেক্কা
- ক্ট = ক + ট; যেমন- ডক্টর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ক্ট্র = ক + ট + র; যেমন- অক্ট্রয়
- ক্ত = ক + ত; যেমন- রক্ত
- ক্ত্র = ক + ত + র; যেমন- বক্ত্র
- ক্ব = ক + ব; যেমন- পক্ব, ক্বণ
- ক্ম = ক + ম; যেমন- রুক্মিণী
- ক্য = ক + য; যেমন- বাক্য
- ক্র = ক + র; যেমন- চক্র
- ক্ল = ক + ল; যেমন- ক্লান্তি
- ক্ষ = ক + ষ; যেমন- পক্ষ
- ক্ষ্ণ = ক + ষ + ণ; যেমন- তীক্ষ্ণ
- ক্ষ্ব = ক + ষ + ব; যেমন- ইক্ষ্বাকু
- ক্ষ্ম = ক + ষ + ম; যেমন- লক্ষ্মী
- ক্ষ্ম্য = ক + ষ + ম + য; যেমন- সৌক্ষ্ম্য
- ক্ষ্য = ক + ষ + য; যেমন- লক্ষ্য
- ক্স = ক + স; যেমন- বাক্স
- খ্য = খ + য; যেমন- সখ্য
- খ্র = খ+ র যেমন; যেমন- খ্রিস্টান
- গ্ণ = গ + ণ; যেমন - রুগ্ণ
- গ্ধ = গ + ধ; যেমন- মুগ্ধ
- গ্ধ্য = গ + ধ + য; যেমন- বৈদগ্ধ্য
- গ্ধ্র = গ + ধ + র; যেমন- দোগ্ধ্রী
- গ্ন = গ + ন; যেমন- ভগ্ন
- গ্ন্য = গ + ন + য; যেমন- অগ্ন্যাস্ত্র, অগ্ন্যুৎপাত, অগ্ন্যাশয়
- গ্ব = গ + ব; যেমন- দিগ্বিজয়ী
- গ্ম = গ + ম; যেমন- যুগ্ম
- গ্য = গ + য; যেমন- ভাগ্য
- গ্র = গ + র; যেমন- গ্রাম
- গ্র্য = গ + র + য; যেমন- ঐকাগ্র্য, সামগ্র্য, গ্র্যাজুয়েট
- গ্ল = গ + ল; যেমন- গ্লানি
- ঘ্ন = ঘ + ন; যেমন- কৃতঘ্ন
- ঘ্য = ঘ + য; যেমন- অশ্লাঘ্য
- ঘ্র = ঘ + র; যেমন- ঘ্রাণ
- ঙ্ক = ঙ + ক; যেমন- অঙ্ক
- ঙ্ক্ত = ঙ + ক + ত; যেমন- পঙ্ক্তি
- ঙ্ক্য = ঙ + ক + য; যেমন- অঙ্ক্য
- ঙ্ক্ষ = ঙ + ক + ষ; যেমন- আকাঙ্ক্ষা
- ঙ্খ = ঙ + খ; যেমন- শঙ্খ
- ঙ্গ = ঙ + গ; যেমন- অঙ্গ
- ঙ্গ্য = ঙ + গ + য; যেমন- ব্যঙ্গ্যার্থ, ব্যঙ্গ্যোক্তি
- ঙ্ঘ = ঙ + ঘ; যেমন- সঙ্ঘ
- ঙ্ঘ্য = ঙ + ঘ + য; যেমন- দুর্লঙ্ঘ্য
- ঙ্ঘ্র = ঙ + ঘ + র; যেমন- অঙ্ঘ্রি
- ঙ্ম = ঙ + ম; যেমন- বাঙ্ময়
- চ্চ = চ + চ; যেমন- বাচ্চা
- চ্ছ = চ + ছ; যেমন- ইচ্ছা
- চ্ছ্ব = চ + ছ + ব; যেমন- জলোচ্ছ্বাস
- চ্ছ্র = চ + ছ + র; যেমন- উচ্ছ্রায়
- চ্ঞ = চ + ঞ; যেমন- যাচ্ঞা
- চ্ব = চ + ব; যেমন- চ্বী
- চ্য = চ + য; যেমন- প্রাচ্য
- জ্জ = জ + জ; যেমন- বিপজ্জনক
- জ্জ্ব = জ + জ + ব; যেমন- উজ্জ্বল
- জ্ঝ = জ + ঝ; যেমন- কুজ্ঝটিকা
- জ্ঞ = জ + ঞ; যেমন- জ্ঞান
- জ্ব = জ + ব; যেমন- জ্বর
- জ্য = জ + য; যেমন- রাজ্য
- জ্র = জ + র; যেমন- বজ্র
- ঞ্চ = ঞ + চ; যেমন- অঞ্চল
- ঞ্ছ = ঞ + ছ; যেমন- লাঞ্ছনা
- ঞ্জ = ঞ + জ; যেমন- কুঞ্জ
- ঞ্ঝ = ঞ + ঝ; যেমন- ঝঞ্ঝা
- ট্ট = ট + ট; যেমন- চট্টগ্রাম
- ট্ব = ট + ব; যেমন- খট্বা
- ট্ম = ট + ম; যেমন- কুট্মল
- ট্য = ট + য; যেমন- নাট্য
- ট্র = ট + র; যেমন- ট্রেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ড্ড = ড + ড; যেমন- আড্ডা
- ড্ব = ড + ব; যেমন- অন্ড্বান
- ড্য = ড + য; যেমন- জাড্য
- ড্র = ড + র; যেমন- ড্রাইভার, ড্রাম (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ড়্গ = ড় + গ; যেমন- খড়্গ
- ঢ্য = ঢ + য; যেমন- ধনাঢ্য
- ঢ্র = ঢ + র; যেমন- মেঢ্র (ত্বক) (মন্তব্য: অত্যন্ত বিরল)
- ণ্ট = ণ + ট; যেমন- ঘণ্টা
- ণ্ঠ = ণ + ঠ; যেমন- কণ্ঠ
- ণ্ঠ্য = ণ + ঠ + য; যেমন- কণ্ঠ্য
- ণ্ড = ণ + ড; যেমন- গণ্ডগোল
- ণ্ড্য = ণ + ড + য; যেমন- পাণ্ড্য
- ণ্ড্র = ণ + ড + র; যেমন- পুণ্ড্র
- ণ্ঢ = ণ + ঢ; যেমন- ষণ্ঢ
- ণ্ণ = ণ + ণ; যেমন- বিষণ্ণ
- ণ্ব = ণ + ব; যেমন- স্হাণ্বীশ্বর
- ণ্ম = ণ + ম; যেমন- চিণ্ময়
- ণ্য = ণ + য; যেমন- পূণ্য
- ৎক = ত + ক; যেমন- উৎকট
- ত্ত = ত + ত; যেমন- উত্তর
- ত্ত্ব = ত + ত + ব; যেমন- সত্ত্ব
- ত্ত্য = ত + ত + য; যেমন- উত্ত্যক্ত
- ত্থ = ত + থ; যেমন- অশ্বত্থ
- ত্ন = ত + ন; যেমন- যত্ন
- ত্ব = ত + ব; যেমন- রাজত্ব
- ত্ম = ত + ম; যেমন- আত্মা
- ত্ম্য = ত + ম + য; যেমন- দৌরাত্ম্য
- ত্য = ত + য; যেমন- সত্য
- ত্র = ত + র যেমন- ত্রিশ, ত্রাণ
- ত্র্য = ত + র + য; যেমন- বৈচিত্র্য
- ৎল = ত + ল; যেমন- কাৎলা
- ৎস = ত + স; যেমন- বৎসর, উৎসব
- থ্ব = থ + ব; যেমন- পৃথ্বী
- থ্য = থ + য; যেমন- পথ্য
- থ্র = থ + র; যেমন- থ্রি (three) (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- দ্গ = দ + গ; যেমন- উদ্গম
- দ্ঘ = দ + ঘ; যেমন- উদ্ঘাটন
- দ্দ = দ + দ; যেমন- উদ্দেশ্য
- দ্দ্ব = দ + দ + ব; যেমন- তদ্দ্বারা
- দ্ধ = দ + ধ; যেমন- রুদ্ধ
- দ্ব = দ + ব; যেমন- বিদ্বান
- দ্ভ = দ + ভ; যেমন- অদ্ভুত
- দ্ভ্র = দ + ভ + র; যেমন- উদ্ভ্রান্ত
- দ্ম = দ + ম; যেমন- ছদ্ম
- দ্য = দ + য; যেমন- বাদ্য
- দ্র = দ + র; যেমন- রুদ্র
- দ্র্য = দ + র + য; যেমন- দারিদ্র্য
- ধ্ন = ধ + ন; যেমন- অর্থগৃধ্নু
- ধ্ব = ধ + ব; যেমন- ধ্বনি
- ধ্ম = ধ + ম; যেমন- উদরাধ্মান
- ধ্য = ধ + য; যেমন- আরাধ্য
- ধ্র = ধ + র; যেমন- ধ্রুব
- ন্ট = ন + ট; যেমন- প্যান্ট (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্ট্র = ন + ট + র; যেমন- কন্ট্রোল (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্ঠ = ন + ঠ; যেমন- লন্ঠন
- ন্ড = ন + ড; যেমন- গন্ডার, পাউন্ড
- ন্ড্র = ন + ড + র; যেমন- হান্ড্রেড
- ন্ত = ন + ত; যেমন- জীবন্ত
- ন্ত্ব = ন + ত + ব; যেমন- সান্ত্বনা
- ন্ত্য = ন + ত + য; যেমন- অন্ত্য
- ন্ত্র = ন + ত + র; যেমন- মন্ত্র
- ন্ত্র্য = ন + ত + র + য; যেমন- স্বাতন্ত্র্য
- ন্থ = ন + থ; যেমন- গ্রন্থ
- ন্থ্র = ন + থ + র; যেমন- অ্যান্থ্রাক্স (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্দ = ন + দ; যেমন- ছন্দ
- ন্দ্য = ন + দ + য; যেমন- অনিন্দ্য
- ন্দ্ব = ন + দ + ব; যেমন- দ্বন্দ্ব
- ন্দ্র = ন + দ + র; যেমন- কেন্দ্র
- ন্ধ = ন + ধ; যেমন- অন্ধ
- ন্ধ্য = ন + ধ + য; যেমন- বিন্ধ্য
- ন্ধ্র = ন + ধ + র; যেমন- রন্ধ্র
- ন্ন = ন + ন; যেমন- নবান্ন
- ন্ব = ন + ব; যেমন- ধন্বন্তরি
- ন্ম = ন + ম; যেমন- চিন্ময়
- ন্য = ন + য; যেমন- ধন্য
- প্ট = প + ট; যেমন- পাটি-সাপ্টা, ক্যাপ্টেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- প্ত = প + ত; যেমন- সুপ্ত
- প্ন = প + ন; যেমন- স্বপ্ন
- প্প = প + প; যেমন- ধাপ্পা
- প্য = প + য; যেমন- প্রাপ্য
- প্র = প + র; যেমন- ক্ষিপ্র
- প্র্য = প + র + য; যেমন- প্র্যাকটিস (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- প্ল = প + ল; যেমন-আপ্লুত
- প্স = প + স; যেমন- লিপ্সা
- ফ্র = ফ + র; যেমন- ফ্রক, ফ্রিজ, আফ্রিকা, রেফ্রিজারেটর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ফ্ল = ফ + ল; যেমন- ফ্লেভার (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ব্জ = ব + জ; যেমন- ন্যুব্জ
- ব্দ = ব + দ; যেমন- জব্দ
- ব্ধ = ব + ধ; যেমন- লব্ধ
- ব্ব = ব + ব; যেমন- ডাব্বা
- ব্য = ব + য; যেমন- দাতব্য
- ব্র = ব + র; যেমন- ব্রাহ্মণ
- ব্ল = ব + ল; যেমন- ব্লাউজ
- ভ্ব =ভ + ব; যেমন- ভ্বা
- ভ্য = ভ + য; যেমন- সভ্য
- ভ্র = ভ + র; যেমন- শুভ্র
- ম্ন = ম + ন; যেমন- নিম্ন
- ম্প = ম + প; যেমন- কম্প
- ম্প্র = ম + প + র; যেমন- সম্প্রতি
- ম্ফ = ম + ফ; যেমন- লম্ফ
- ম্ব = ম + ব; যেমন- প্রতিবিম্ব
- ম্ব্র = ম + ব + র; যেমন- মেম্ব্রেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ম্ভ = ম + ভ; যেমন- দম্ভ
- ম্ভ্র = ম + ভ + র; যেমন- সম্ভ্রম
- ম্ম = ম + ম; যেমন- সম্মান
- ম্য = ম + য; যেমন- গ্রাম্য
- ম্র = ম + র; যেমন- নম্র
- ম্ল = ম + ল; যেমন- অম্ল
- য্য = য + য; যেমন- ন্যায্য
- র্ক = র + ক; যেমন - তর্ক
- র্ক্য = র + ক + য; যেমন- অতর্ক্য (তর্ক দিয়ে যার সমাধান হয় না)
- র্গ্য = র + গ + য; যেমন - বর্গ্য (বর্গসম্বন্ধীয়)
- র্ঘ্য = র + ঘ + য; যেমন- দৈর্ঘ্য
- র্চ্য = র + চ + য; যেমন- অর্চ্য (পূজনীয়)
- র্জ্য = র + জ + য; যেমন- বর্জ্য
- র্ণ্য = র + ণ + য; যেমন- বৈবর্ণ্য (বিবর্ণতা)
- র্ত্য = র + ত + য; যেমন- মর্ত্য
- র্থ্য = র + থ + য; যেমন- সামর্থ্য
- র্ব্য = র + ব + য; যেমন- নৈর্ব্যক্তিক
- র্ম্য = র + ম + য; যেমন- নৈষ্কর্ম্য
- র্শ্য = র + শ + য; যেমন- অস্পর্শ্য
- র্ষ্য = র + ষ + য; যেমন- ঔৎকর্ষ্য
- র্হ্য = র + হ + য; যেমন- গর্হ্য
- র্খ = র + খ; যেমন- মূর্খ
- র্গ = র + গ; যেমন- দুর্গ
- র্গ্র = র + গ + র; যেমন- দুর্গ্রহ, নির্গ্রন্হ
- র্ঘ = র + ঘ; যেমন- দীর্ঘ
- র্চ = র + চ; যেমন- অর্চনা
- র্ছ = র + ছ; যেমন- মূর্ছনা
- র্জ = র + জ; যেমন- অর্জন
- র্ঝ = র + ঝ; যেমন- নির্ঝর
- র্ট = র + ট; যেমন- আর্ট, কোর্ট, কম্ফর্টার, শার্ট, কার্টিজ, আর্টিস্ট, পোর্টম্যানটো, সার্টিফিকেট, কনসার্ট, কার্টুন, কোয়ার্টার (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ড = র + ড; যেমন- অর্ডার, লর্ড, বর্ডার, কার্ড (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ণ = র + ণ; যেমন- বর্ণ
- র্ত = র + ত; যেমন- ক্ষুধার্ত
- র্ত্র = র + ত + র; যেমন- কর্ত্রী
- র্থ = র + থ; যেমন- অর্থ
- র্দ = র + দ; যেমন- নির্দয়
- র্দ্ব = র + দ + ব; যেমন- নির্দ্বিধা
- র্দ্র = র + দ + র; যেমন- আর্দ্র
- র্ধ = র + ধ; যেমন- গোলার্ধ
- র্ধ্ব = র + ধ + ব; যেমন- ঊর্ধ্ব
- র্ন = র + ন; যেমন- দুর্নাম
- র্প = র + প; যেমন- দর্প
- র্ফ = র + ফ; যেমন- স্কার্ফ (মন্তব্য: মূলত ইংরেজি ও আরবী-ফার্সি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ভ = র + ভ; যেমন- গর্ভ
- র্ম = র + ম; যেমন- ধর্ম
- র্য = র + য; যেমন- আর্য (মন্তব্য দেখুন)
- র্ল = র + ল; যেমন- দুর্লভ
- র্শ = র + শ; যেমন- স্পর্শ
- র্শ্ব = র+ শ + ব; যেমন- পার্শ্ব
- র্ষ = র + ষ; যেমন- ঘর্ষণ
- র্স = র + স; যেমন- জার্সি, নার্স, পার্সেল, কুর্সি (মন্তব্য: মূলত ইংরেজি ও আরবী-ফার্সি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্হ = র + হ; যেমন- গার্হস্থ্য
- র্ঢ্য = র + ঢ + য; যেমন- দার্ঢ্য (অর্থাৎ দৃঢ়তা)
- ল্ক = ল + ক; যেমন- শুল্ক
- ল্ক্য = ল + ক + য; যেমন- যাজ্ঞবল্ক্য
- ল্গ = ল + গ; যেমন- বল্গা
- ল্ট = ল + ট; যেমন- উল্টো
- ল্ড = ল + ড; যেমন- ফিল্ডিং (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ল্প = ল + প; যেমন- বিকল্প
- ল্ফ = ল + ফ; যেমন- গল্ফ (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ল্ব = ল + ব; যেমন- বিল্ব, বাল্ব
- ল্ভ = ল + ভ; যেমন- প্রগল্ভ
- ল্ম = ল + ম; যেমন- গুল্ম
- ল্য = ল + য; যেমন- তারল্য
- ল্ল = ল + ল; যেমন- উল্লাস
- শ্চ = শ + চ; যেমন- পুনশ্চ
- শ্ছ = শ + ছ; যেমন- শিরশ্ছেদ
- শ্ন = শ + ন; যেমন- প্রশ্ন
- শ্ব = শ + ব; যেমন- বিশ্ব
- শ্ম = শ + ম; যেমন- জীবাশ্ম
- শ্য = শ + য; যেমন- অবশ্য
- শ্র = শ + র; যেমন- মিশ্র
- শ্ল = শ + ল; যেমন- অশ্লীল
- ষ্ক = ষ + ক; যেমন- শুষ্ক
- ষ্ক্র = ষ + ক + র; যেমন- নিষ্ক্রিয়
- ষ্ট = ষ + ট; যেমন- কষ্ট
- ষ্ট্য = ষ + ট + য; যেমন- বৈশিষ্ট্য
- ষ্ট্র = ষ + ট + র; যেমন- রাষ্ট্র
- ষ্ঠ = ষ + ঠ; যেমন- শ্রেষ্ঠ
- ষ্ঠ্য = ষ + ঠ + য; যেমন- নিষ্ঠ্যূত
- ষ্ণ = ষ + ণ; যেমন- কৃষ্ণ
- ষ্প = ষ + প; যেমন- নিষ্পাপ
- ষ্প্র = ষ + প + র; যেমন- নিষ্প্রয়োজন
- ষ্ফ = ষ + ফ; যেমন- নিষ্ফল
- ষ্ব = ষ + ব; যেমন- মাতৃষ্বসা
- ষ্ম = ষ + ম; যেমন- উষ্ম
- ষ্য = ষ + য; যেমন- শিষ্য
- স্ক = স + ক; যেমন- মনোস্কামনা
- স্ক্র = স + ক্র; যেমন- ইস্ক্রু (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্খ = স + খ; যেমন- স্খলন
- স্ট = স + ট; যেমন- স্টেশন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ট্র = স + ট্র; যেমন- স্ট্রাইক (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ত = স + ত; যেমন- ব্যস্ত
- স্ত্ব = স + ত + ব; যেমন- বহিস্ত্বক
- স্ত্য = স + ত + য; যেমন-অস্ত্যর্থ
- স্ত্র = স + ত + র; যেমন- স্ত্রী
- স্থ = স + থ; যেমন- দুঃস্থ
- স্থ্য = স + থ + য; যেমন- স্বাস্থ্য
- স্ন = স + ন; যেমন- স্নান
- স্প = স + প; যেমন- আস্পর্ধা
- স্প্র = স + প +র; যেমন- স্প্রিং (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্প্ল = স + প + ল; যেমন- স্প্লিন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ফ = স + ফ; যেমন- আস্ফালন
- স্ব = স + ব; যেমন- স্বর
- স্ম = স + ম; যেমন- স্মরণ
- স্য = স + য; যেমন- শস্য
- স্র = স + র; যেমন- অজস্র
- স্ল = স + ল; যেমন- স্লোগান
- হ্ণ = হ + ণ; যেমন- অপরাহ্ণ
- হ্ন = হ + ন; যেমন- চিহ্ন
- হ্ব = হ + ব; যেমন- আহ্বান
- হ্ম = হ + ম; যেমন- ব্রাহ্মণ
- হ্য = হ + য; যেমন- বাহ্য
- হ্র = হ + র; যেমন- হ্রদ
- হ্ল = হ + ল; যেমন- আহ্লাদ
- হৃ = হ + ৃ; যেমন- হৃদয়, ব্যবহৃত
মন্তব্য
১) র্য-কে যুক্তবর্ণ ধরা হয়েছে, কেননা এটি র ও য-এর সমষ্টি। অন্যদিকে র্যাব, র্যাম, র্যাঁদা, ইত্যাদিতে উপস্থিত র্য-কে যুক্তবর্ণ হিসেবে ধরা হয়নি, কেননা এটি আসলে র্যা-এর অংশ, আর র্যা হল র ব্যঞ্জনধ্বনি এবং অ্যা স্বরধ্বনির মিলিত রূপ।
যতিচিহ্ন
- যথাস্থানে সেমি কোলন (;) ব্যবহার করুন। সেমি কোলন-এর পূর্বে হাফ-স্পেস দেয়ার রীতি ঊনিশ শতক থেকে চলে আসছে। তবে ইউনিকোডে হাফ-স্পেস দেয়া যায় না। পূর্ণ স্পেস ব্যবহার করা সঠিক।
- কোলন ড্যাশ (:—)। এখনো এটি ইউনিকোডে লেখা যায় না।
- ড্যাশ বনাম হাইফেন। এখনো পর্যন্ত ইউনিকোডে ড্যাশ এ হাইফেন পৃথকভাবে লেখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয় নি। উভয়ের জন্য একই চিহ্ন ব্যবহার্য (-)।
উৎস (কালানুক্রমিক)
- বিশ্বভারতীর বাংলা বানানের নিয়ম (১৯২৫; ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলা বানানের নিয়ম (১৯৩৬)
- জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বানানরীতি (১৯৮৪)
- আনন্দবাজার পত্রিকা: বানানবিধি (১৯৯১)
- বাংলা একাডেমী: প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (১৯৯২, সংশোধিত সংস্করণ ২০০০)
- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানানরীতি (১৯৯৫)
- শিশু সাহিত্য সংসদ ও সাহিত্য সংসদ প্রকাশনা সংস্থার বাংলা বানানবিধি (অনির্ণীত)