বানান বিশ্লেষণ : ব্+ই+শ্+এ+ষ্+য্+অ।
উচ্চারণ: bi.ʃeʃ.ʃo (বি.শেশ্.শো)
বি.শেশ্.শো [বি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হবে। ষ্য -এর জন্য দ্বিত্ব শ্.শ ধ্বনি তৈরি করে। শে ধ্বনির সাথে ষ্য-এর বিভাজিত ধ্বনির শ্ যুক্ত হয়ে শেশ্ ধ্বনি তৈরি করে। অবশিষ্ট শো ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হয়।]
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত विशेष्य (বিশেষ্য)>বাংলা অংশ।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: বি (অতিশায়িত)- Öশিষ্ (শেষ থাকা, শেষ রাখা) +য (ণ্যৎ), কর্মবাচ্য।
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| মুক্ত-শ্রেণি শব্দ | শব্দ | ভাষা একক | খণ্ডিতাংশ | সম্পর্ক | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: বাংলা ব্যাকরণে বর্ণিত একটি পদ। এই পদ কোনো সত্ত্বাকে নাম দ্বারা প্রকাশ করে।
ইংরেজি: Noun। ইংরেজি এই শব্দটি এসেছে ল্যাটিন nomen থেকে। এর অর্থ হলো নাম। সাধারণভাবে এর সংজ্ঞা হিসাবে বলা হয়, কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে।
ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ:
একটি শব্দ কোন্ পদের পর্যায়ে পড়বে, তা নির্ভর করবে বাক্যে শব্দটি কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তার বৈশিষ্ট্যের উপর। এই বিচারে ঢালাওভাবে গোড়াতেই কোন্ শব্দটি বিশেষ্য হবে তা নির্ধারণ করা যায় না। ধরা যাক একটি শব্দ 'নীল'। যদি বলি এই রঙটি 'নীল'। তার অর্থ হলো− কোনো সুনির্দিষ্ট রঙের নাম বলা হচ্ছে। তাই এখানে 'নীল' শব্দটি বিশেষ্য। কিন্তু যদি বলা যায় 'নীল চোখ'। এই বাক্যে 'নীল' শব্দটি চোখকে বিশেষিত করছে। এই অর্থে 'নীল' এখানে বিশেষণ।
আবার শব্দগুচ্ছ (Phrase) বিশেষ্য হতে পারে। যেমন− রাজার ছেলে বাড়ি যায়। এক্ষেত্রে ‘রাজার’ ও ‘ছেলে’ দুটি পৃথক শব্দ হলেও, দুটি শব্দ মিলে একটি একক অর্থ প্রকাশ করে। ‘রাজা’ শব্দের সাথে ‘র’ (ষষ্ঠী বিভক্তি) যুক্ত হয়ে ‘ছেলে’ –শব্দের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। এখানে ‘রাজার’ সাথে ক্রিয়াপদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই, কিন্তু ‘ছেলে’-র সাথে সম্পর্ক আছে। আবার ‘রাজার ছেলে’ যখন শব্দগুচ্ছ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তখন ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়।
আবার কখনও কখনও একটি খণ্ডবাক্য (Clause) বিশেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন- খাবারের তালিকায় পুঁই শাক আর ইলিশের কাঁটাকুটো দিয়ে তৈরি যে পদটি ছিল, সেটাই ছিল সব চেয়ে ভালো। এখানে সেটাই সর্বনাম, এই সর্বনামটি ব্যবহৃত হয়েছে "পুঁই শাক আর ইলিশে কাঁটাকুটো দিয়ে তৈরি যে পদটি ছিল"- এর পরিবর্তে। এখানে এই খণ্ডবাক্য পুরোটুকুই বিশেষ্যে।
উপরের আলোচনা অনুসারে আমরা বিশেষ্যকে প্রাথমিকভাবে তিনটি শ্রেণীতে বিভাজিত করতে পারি। সুনির্দিষ্টভাবে এদেরকে যেভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, তা হলো-
বিশেষ্য
শব্দ শব্দগুচ্ছ খণ্ডবাক্য
বিশেষ্য- শব্দ বিশেষ্য-শব্দগুচ্ছ বিশেষ্য-খণ্ডবাক্য
উল্লেখ্য বিশেষ্য-শব্দকে সাধারণভাবে বিশেষ্য নামেই চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু বিশেষ্য- বাক্যাংশ বা বিশেষ্য- খণ্ডবাক্যকে পুরো নামেই অভিহিত করা হয়।
বিশেষ্য (বিশেষ্য-শব্দ)
ব্যাকরণের পদসমূহের একটি বিশেষ পদ হলো 'বিশেষ্য-শব্দ' পদ। পদের সাধারণভাবে কোনো একক শব্দের ক্ষেত্রে বিশেষ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়।
একক শব্দ দ্বারা বহুবিধ বিষয়ের নামকরণ করা হয়ে থাকি। এই বিষয়গুলো হতে পারে− বস্তু, অবস্তু, ধারণা, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি। নামই যদি বিশেষ্য হয়, তা হলে− প্রকাশ করা যায় এমন যে কোনো কিছুরই নাম হলো বিশেষ্য। যখন ‘করি’ শব্দটি ব্যবহার করি তখন কাজ করার একটি ভাবের নামকেই প্রকাশ করে। এই বিচারে ‘করি’ শব্দটিও বিশেষ্য হয়ে যায়। কিন্তু শব্দের সূক্ষ্ম বিচারে ‘করি’ শব্দটিকে বিশেষ্য না বলে ক্রিয়াপদ বলা হয়। এইভাবে বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দের সূক্ষ্ম বিচার করে, ব্যাকরণে পদগুলোকে বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে বিশেষ্যর সংজ্ঞা নিরুপণ করতে হলে বলতে হয়− বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলোর ভিতর থেকে অন্যান্য পদ (বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া, অব্যয়) বাদ দিয়ে যা থাকে, তাই বিশেষ্য। অর্থাৎ যা গুণ প্রকাশ করে না, যা অন্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় না, যা কোনো কাজ করাকে প্রকাশ করে না এবং নিজে অপরির্তিত থেকে অন্য পদকে সমন্বিত করে না−তাই বিশেষ্য।
যে কোন শব্দের বিশ্লেষণ করা হয় বিভিন্ন দিক থেকে। যেমন− উচ্চারণ, উৎপত্তি, রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, সাধারণ অর্থগত বিষয়, বাক্যিক পরিমণ্ডলে অর্থগত বিষয়। এর ভিতরে উচ্চারণ ও উৎপত্তি বিচার করা হয় একটি ভাষায় ব্যবহৃত সকল শব্দের সার্বিক বিশ্লেষণের বিচারে। বাকি দুটি বিষয়ের ব্যাপ্তি অনুরূপ হলেও, বিশেষ্যের বিচারে তা পৃথক আলোচনা করাই যেতে পারে। এই বিচারে বিশেষ্য-শব্দের পদের আলোচনা দুটি ধারায় হতে পারে। ধারা দুটি হলো-
১. বিশেষ্য-শব্দের গাঠনিক বিশ্লেষণ
২. বিশেষ্য-শব্দের অর্থগত বিশ্লেষণ