বিশেষ্য-শব্দ হলো এমন একটি পারিভাষিক শব্দ, যা কোনো একক শব্দকে নির্দেশিত করা হয়। এখানে সাধারণ ভাবে বিশেষ্য বলতে বিশেষ্য-শব্দকেই বুঝানো হয়েছে।
বাক্যে ব্যবহৃত যে সকল পদকে আমরা বিশেষ্য হিসাবে বিবেচনা করি, তাদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে আমরা দুটি শ্রেণী পাই। এর একটি হলো অর্থহীন নাম অপরটি অর্থযুক্ত নাম।
অর্থহীন বিশেষ্য : এমন কিছু সুনির্দিষ্ট শব্দ আছে, যাদের কোন সুনির্দিষ্ট অর্থ পাওয়া যায় না। যেমন-আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে। এখানে আগডুম, বাগডুম ও ঘোড়াডুম কি অর্থ বহন করে তা সুনির্দষ্টভাবে জানা যায় না। তাই এগুলো হবে অর্থহীন শব্দ (non-sense word)। এ ক্ষেত্রে এই জাতীয় বিশেষ্যেকে যে ভাবে নির্দেশিত হবে, তা হলো–
আগডুম {বিশেষ্য, অর্থহীন}
অর্থবোধক বিশেষ্য : অর্থহীন কিছু শব্দ ছাড়া, আর বাকি সকল শব্দই কোনো না কোনো অর্থ বহন করে। মূলত কিছু অর্থহীন শব্দ ছাড়া, ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ মাত্রেই এক বা একাধিক অর্থ রয়েছে। এই বিচারে বিশেষ্য পদকে প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন–
অর্থহীন পদ মূলত একটি বিচ্ছিন্ন শ্রেণী। এই জাতীয় শব্দকে নির্দেশিত করার ক্ষেত্রে ‘অর্থহীন’ শ্রেণীগত নাম ব্যবহার করলেও অর্থবোধক শব্দের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন নেই।
বিশেষ্য পদের ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
আমাদের শব্দজগতে যত ধরনের অর্থযুক্ত নাম বা বিশেষ্য রয়েছে, তার কিছু আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করি, আর বাকি সব উপলব্ধি করি ইন্দ্রিয়াতীত সহজাত অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে। ভাষাতত্ত্বে একে বিচার করা হয় সত্তা হিসাবে। যা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম নিয়ে স্বাধীনভাবে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে, তাই হলো সত্তা। বিশেষ্য পদবাচ্যের কোন শব্দের অর্থগত বিষয়টি পাওয়া যায় তার সত্তা-পরিচয়ের মধ্য দিয়ে। যে কোনো সত্তাকে ধাপে ধাপে তার পরিচয় তুলে ধরতে গেলে একটি ঊর্ধ্বক্রমিক বিন্যাস সৃষ্টি করে। একে বলা হয় ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশকতা (Hypernymy, hypernym, superordinate, superordinate word)। যদিও অর্থের প্রকৃতি বিচার করেই এই 'ঊর্ধ্বক্রমিক বিন্যাস'-কে প্রকাশ করা হয়, কিন্তু তাতে করে শেষ পর্যন্ত শ্রেণিগত ভাবই মূখ্য হয়ে উঠে। যে কোনো ভাষায় ব্যবহৃত কোনো শব্দের অর্থের চেয়ে ওই শব্দের শ্রেণীগত মান-প্রদানে অধকিতর গুরুত্ব দেয় করে এমন শব্দ। তাই বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাজনে ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশকতা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
ভাষাতত্ত্বে বলা হয়– বিশেষ্য পদবাচ্যের কোন শব্দের অর্থগত সত্তার ঊর্ধ্বক্রমিক বিন্যাস নির্দেশিত হয় ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশকতা (Hypernymy) দিয়ে। আর এই বিন্যাসের স্তরগুলির যে নির্দেশে বিন্যস্ত থাকে তাকে বলা হয় ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশক (Hypernym) দিয়ে। ভাষাতত্ত্বে স্বীকার করে নেওয়া হয়, অর্থযুক্ত সকল শব্দেরই নিজস্ব সত্তা আছে। তাই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে এমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা জ্ঞাত বা সিদ্ধান্তকৃত এমন বিষয়কে সত্তা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই বিষয়বস্তু পঞ্চেন্দ্রিয় (মন ব্যতীত) দিয়ে শনাক্ত হতে পারে বা মন দিয়ে অনুভব করা যেতে পারে। এই বিচারে সত্তা হতে পারে–
দৈহিক সত্তা (Physical entity)। দৈহিক অস্তিত্ব আছে এমন সত্তা।
বিমূর্ত-সত্তা (Abstract entity)। শুধুমাত্র বিমূর্ত (দৈহিক রূপহীন) অস্তিত্ব আছে এমন সত্তা।
উপরের দুটির কোন সত্তার ভিতরে আনা যায় না এমন সত্তা হলো–
অনির্দেশিত সত্তা (thing)। সুনির্দিষ্টভভাবে চিহ্নিত হয় নাই এমন সত্তা।
এই ভাবে যদি প্রতিটি শব্দের প্রকৃতি অনুসারে আমরা যদি স্তরে স্তরে সাজানো যায়, তাহলে একটি অন্তর্ভুক্তির স্তর বিন্যাসের সৃষ্ট হবে। উদাহরণ স্বরূপ নিচে ইংরেজি শব্দজালিকা অনুসারে 'মানুষ' নামক প্রজাতির অন্তর্ভুক্তিসমূহ দেখানো হলো-
homo, man, human being, human –হোমো, মানব, মানবজাতি, মনুষ্য
=> hominid --হোমিনিডি
=> primate – প্রাইমেট
=> placental, placental mammal, eutherian, eutherian mammal –অমরাযুক্ত
=> mammal, mammalian –স্তন্যপায়ী
=> vertebrate, craniate – মেরুদণ্ডী
=> chordate –কর্ডেট
=> animal, animate being, beast, brute, creature, fauna –প্রাণী
=> organism, being –জীবসত্তা
=> living thing, animate thing –জীবন্ত বস্তু
=> object, physical object –দৈহিক লক্ষ্যবস্তু
=> physical entity –দৈহিক সত্তা
=> entity –সত্তা
লক্ষ্য করুন এই স্তরগুলিকে এইভাবে প্রকাশ করলে একটি উর্ধ্বক্রমবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। শব্দজালিকায় উর্ধ্বক্রমবাচক ধারণাকে বলা হয়েছে- ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশকতা (Hypernymy)। মূলত সমার্থশব্দসেট (synset) নিয়ে অন্তর্ভুক্তির স্তর গঠিত হয়। আর এই অন্তর্ভুক্তির ঊর্ধ্বক্রমিক উপস্থাপন করা হয় ঊর্ধ্বক্রমনির্দেশক (Hypernym) দিয়ে।
বিশেষ্যের এই শ্রেণিবিভাজনের স্তরগুলো সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে তুলে ধরা শব্দজালিকা অংশে।
দেখুন : তালিকা ১ : অংশ...ড্রাগ
তালিকা ২: তত্ত্ব...মৌলিক প্রজ্ঞা প্রক্রিয়া
তালিকা ৩ : যন্ত্র...হ্যালোজেন